করোনাভাইরাসের আক্রমণে স্থগিতই হয়ে গেছে আইপিএল। এখন প্রশ্ন, ভারতে থাকা বিদেশি ক্রিকেটাররা দেশে ফিরবেন কীভাবে? কীভাবে দেশে ফিরবেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান?
ভারতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় অনেক দেশই ভারতফেরত ব্যক্তিদের দেশে প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও সর্বশেষ নির্দেশনায় বলেছে, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরা ব্যক্তিদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক।
সে ক্ষেত্রে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা সাকিব এবং রাজস্থান রয়্যালসে খেলা মোস্তাফিজকেও এই নিয়মের মধ্য দিয়েই যেতে হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী।
এ মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ সামনে রেখে সাকিব ও মোস্তাফিজের দেশে ফেরার কথা ছিল ১৯ মে। কিন্তু তখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে গেলে সিরিজটাই খেলতে পারতেন না তাঁরা। বিসিবি তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের কোয়ারেন্টিনের সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। তা ছাড়া আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয়ের ওপরও আর আস্থা রাখতে পারছে না বিসিবি।
নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরাও মনে করি, সবকিছু সরকারি নির্দেশনা মতো হওয়া উচিত। যেহেতু আইপিএলের জৈব সুরক্ষাবলয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে করোনা ছড়িয়েছে, সেখান থেকে আসা কাউকে সরাসরি দলের সঙ্গে নিয়ে আমরা অন্য ক্রিকেটারদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। ’
তবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শুরুর ৪–৫ দিন পর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে এবং কোনো উপসর্গ না থাকলে অনেক সময় কোয়ারেন্টিন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাকিব, মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে নিয়ম একটু শিথিল হবে—এমনটাই আশা করছে বিসিবি। সে ক্ষেত্রে দু–এক দিনের মধ্যে ফিরতে পারলে শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগেই কোয়ারেন্টিন শেষ হয়ে যাবে তাঁদের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডেটি হওয়ার কথা ২২ মে।
এই দুই ক্রিকেটার ভারত থেকে ফিরবেন কবে এবং কীভাবে—সেটাও একটা প্রশ্ন। ভারতের সঙ্গে তো এখন সব ধরনের যোগাযোগই বন্ধ বাংলাদেশের! বিসিবির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বিসিসিআইর ব্যবস্থাপনাতেই বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশে ফেরত পাঠানোর কথা। সে ক্ষেত্রে সাকিব, মোস্তাফিজ দেশে ফিরতে পারেন বিসিসিআইর ভাড়া করা বিমানে। ‘এ ক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা লাগলে সেটা আমরা করব’—বলেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।
তবে, একদিকে বলা হচ্ছে এক সপ্তাহ সবাইকে কঠোর কোয়ারেন্টিন করিয়ে মুম্বাইয়ে আবার আইপিএল শুরু করা হতে পারে। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, এবারের মতো আইপিএল শেষ, এটা মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিসিসিআই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আইপিএলের বাকিটা আয়োজনের চেষ্টা করার কথাও শোনানো হচ্ছে।
একে একে আইপিএলের চারটি দলে করোনার সংক্রমণের খবর পাওয়ার পরই আইপিএল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। কারণ, ভারত থেকে যাওয়া যেকোনো ব্যক্তির ১৪ দিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মে মাসের অর্ধেক পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকায় অস্ট্রেলিয়ান অনেক ক্রিকেটারই দেশে না ফিরে পুরো আইপিএল শেষ করেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু আইপিএল যদি বাতিলই হয়ে যায়, তাঁদের সে পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে।
শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, আইপিএল স্থগিত হওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই মূল আলোচনা, বিদেশি ক্রিকেটাররা এখন কী করবেন ?
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ভারত ফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে ভারত থেকে সাকিব, মোস্তাফিজদের কোয়ারেন্টিনের ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে আগেই সরকারের নির্দেশনা চেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ওদিকে আইপিএলের পর সিরিজ আছে অস্ট্রেলিয়ারও। এ অবস্থায়ও ক্রিকেটারদের একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয় অস্ট্রেলিয়া সরকার। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ভারতে ছিলেন, এমন অস্ট্রেলিয়ান ১৪ দিন পার হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার চেষ্টা করলে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে। শাস্তির অঙ্কও কম নয়। সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের জেল কিংবা ৬৬ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বাংলাদেশি মূল্যমানে ৪৩ লাখ টাকা) অথবা দুটি শাস্তিই জুটতে পারে। ১৫ মে আবার নতুন করে এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভেবে দেখা হবে।
এমনিতেই দলে করোনা ধরা পড়ায় দিল্লি ক্যাপিটালসে থাকা স্টিভ স্মিথ, মার্কাস স্টয়নিস, রিকি পন্টিংকে কঠোর কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে আগামী ছয় দিন। কলকাতা নাইট রাইডার্সে যে ভাগ্য বরণ করেছেন প্যাট কামিন্স, বেন কাটিং ও ডেভিড হাসি।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও চেন্নাই সুপার কিংসে খেলা ডেভিড ওয়ার্নার ও জেসন বেহরেনডর্ফেরও কঠোর কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা ছয় দিন। কোয়ারেন্টিন শেষেও তাঁদের দেশে ফেরার পথ বন্ধ করে রেখেছে সরকার। অন্তত ১৫ মের আগে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার কোনো সুযোগ নেই তাঁদের।