পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা এবং পরে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে করা মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)। সংগঠনের সভাপতি মোজাহেদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসান জাকির আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিআইজেএফ বিবৃতিতে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ভেতরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অপ্রত্যাশিত এবং অত্যন্ত লজ্জাজনক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আটকে রাখা, হেনস্তা করা, চিকিৎসা না করে থানায় হস্তান্তর করা এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এমন ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করে বিআইজেএফ। কোভিড পরিস্থিতিতে যেখানে সবাই একসঙ্গে লড়বে, সেখানে সাংবাদিককে হেনস্তা ও আটক কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো কালো হাত গণমাধ্যমকর্মীদের রুখে দিতে পারবে না। স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেখানে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের সাংবাদিক হয়রানি করতে উৎসাহ দেওয়া হলো। সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সব শেষে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন বিআইজেএফ।
এর আগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নাকচ করেছেন আদালত। তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর জামিনের শুনানি হতে পারে। আজ বেলা ১১টার একটু পর রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাঁর রিমান্ড নাকচ করেন।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালতে রোজিনা ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন প্রথম আলোর নিয়োজিত আইনজীবী এহসানুল হক সামাজি, আশরাফ উল আলম ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার। এ ছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী আবদুর রশীদ, ব্লাস্টের পক্ষে আইনজীবী মশিউর রহমান ও আইনজীবী সুমন কুমার রায় শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।
সকাল আটটার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। রোজিনা ইসলামের স্বামী মনিরুল ইসলাম সে সময় জানান, তাঁকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে। তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।