মোংলা বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ১৫৫টি রিকন্ডিশন্ড (একবার ব্যবহৃত) গাড়ি নিলামে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ৩০ মে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে করোনার কারণ দেখিয়ে “বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)” মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা পুরোনো বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির নিলাম আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বারভিডার একজন নেতা জানান, মোংলা কাস্টমস হাউস ১৫৫টি গাড়ি নিলামে বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যেসব গাড়ি নিলাম করা হবে তার মধ্যে রয়েছে রিকন্ডিশন্ড টয়োটা অ্যাকুয়া, টয়োটা ক্রাউন, টয়োটা হাইয়েস, টয়োটা টাউনএসি, টয়োটা এক্সিও, টয়োটা প্রভোক্স, টয়োটা প্রিমিও, টয়োটা এলিওন, সুজুকি সুইফট, প্রাইম মুভার প্রভৃতি। গাড়িগুলো বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সেই অবস্থায় নিলামে বিক্রি করা হবে।
মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় বারভিডা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আবদুল হক বলেন, ‘একটি মহলের স্বার্থ রক্ষার জন্য’ আমদানিকারকদের না জানিয়ে এধরনের নিলামের উদ্যোগ নিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
দেশে আমদানি করা গাড়ির অধিকাংশই সমুদ্রবন্দর হয়ে আসে। বন্দরে আমদানি শুল্ক পরিশোধের পাশাপাশি প্রতিটি বন্দরে অবস্থানের জন্য দৈনিক প্রায় ৩০০ টাকা করে ভাড়া গুণতে হয় আমদানিকরকদের।
ওই বন্দরে অপেক্ষমাণ পাঁচ হাজার গাড়ির মধ্যে অনেক গাড়ির অবস্থানকাল পাঁচ বছরেরও বেশি হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের আগে বন্দরে ঢুকেছে এমন কয়েকশ গাড়ি সম্প্রতি নিলামে তুলেছে কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হক বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বাজার মন্দা হয়ে পড়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বন্দর ভাড়ায় বিশেষ ছাড় দেওয়ার আবেদন ছিল তাদের। কিন্তু সেই আবেদন না মেনে এখন কম দামে বাজারে গাড়ি ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে আমদানিকারকরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি পুরনো গাড়ির বাজারও নষ্ট হচ্ছে।
জরুরি ভিত্তিতে বর্তমান নিলাম আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত করা এবং এই সময়ের মধ্যে বন্দর ভাড়ায় মূল্য ছাড়ের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আবদুল হক বলেন, “বন্দর ফাঁকা করা ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোই যদি তাদের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইলে নিলামে আমদানিকরকদের প্রাধান্য দিতে পারে। এতে বন্দরও লাভবান হবে আমদানিকারকরাও তাদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নিলামে অংশ নিতেই দিচ্ছে না।”
২০২০ সালে মহামারীর মধ্যেও ছয় হাজার রিকন্ডিশনড গাড়ি প্রয়োজনীয় ভাড়া ও রাজস্ব আদায় করে বন্দর থেকে ছাড়ানো হয়েছে। বাজার মন্দা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই দুই লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে এসব গাড়ি বিক্রি করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
মোংলা বন্দরে পরিচালিত ‘বারভিডা লেভি’ আদায় কার্যক্রমে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিষয়েও সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানান হয়।
আবদুল হক বলেন, বারভিডার বার্ষিক সাধারণ সভা ২০১৯ এ সাধারণ সদস্যরা এই লেভি আদায়ের বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ড্রাইভিং স্কুল পরিচালনার মাধ্যমে যোগ্য চালক তৈরি করে দুর্ঘটনা কমানো, দুর্ঘটনা রোধে গবেষণাসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে এই লেভির অর্থ ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“বারভিডা লেভি আদায় কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকেই স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় সৃষ্ট বিভিন্ন বিভ্রান্তির প্রেক্ষিতে কার্যক্রমটিতে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এই মহৎ এবং কল্যাণমূলক পদক্ষেপটি যাতে অব্যাহত থাকে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
বারভিডার সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সম্রাট ও জসিম উদ্দিন মিন্টু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য জিয়াউল ইসলাম, নাজমুল আলম চৌধুরী, ইউনূছ আলী ও মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।