হাইপারটেনশন বহু সংখ্যক রোগ ডেকে নিয়ে আসে। সঠিক চিকিৎসা না হলে মারাত্মক হতে পারে এটি।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ-এর চিকিৎসায় সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ১৭ মে এই দিনটিকে পালন করা হয়। হাইপারটেনশন বহু রোগ ডেকে নিয়ে আসে। সঠিক চিকিৎসা না হলে মারাত্মক হতে পারে এটি। তাই এর সঠিক পরীক্ষা প্রয়োজন। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে-তে (World Hypertension Day) প্রথমেই যেটা জানতে হবে রক্তচাপ বা বিপির সংজ্ঞা। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (UK’s National Health Service) অনুসারে, রক্তচাপ হল মানব দেহে রক্তের সরবরাহ করতে যে শক্তি প্রয়োজন হয় তার পরিমাপ। ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য পোর্টাল (India’s National Health Portal) বলেছে, একজন ব্যক্তির রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০-এর উপরে হয়, তবে সেটা হাইপারটেনশনের আওতায় পড়ে। আর যদি সেটা ১৮০/১২০ হয় তবে সেটা গুরুতর বলে বিবেচিত হবে।
লবণ আমাদের খাদ্যতালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তবে বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে লবণ এবং হাইপারটেনশন মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যে সকল লোকেরা ডায়েটরি সোডিয়াম (Dietary Sodium) গ্রহণ করেন, তাঁদের হাইপারটেনশন হওয়ার প্রবণতা থাকে। কারণ, লবণ গ্রহণের ফলে বেশি পরিমাণে জলের সঞ্চার হয় যা পরবর্তীতে হার্টের পক্ষে রক্ত পাম্প করা আরও কঠিন করে তোলে, এর ফলে রক্তনালীতে চাপ বাড়ায়। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হাইপারটেনশনের জন্য নিয়মিত লবণ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যে সমস্ত লোকেরা ডায়েটে কম লবণ গ্রহণ করেন তাঁদের রক্তচাপ হ্রাস পেতে দেখা গিয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ মারাত্মক হতে পারে। বহু সংখ্যক রোগীদের ক্ষেত্রে এটা প্রমাণিত হয়েছে। যাঁরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন রয়েছে। এই বছর ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে-র থিম বা লক্ষ্য হল রক্তচাপকে সঠিক ভাবে পরিমাপ করা, নিয়ন্ত্রণ করা, দীর্ঘজীবী হওয়া। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং অবশ্যই মাঝে মাঝে রক্তচাপ মাপাতে হবে। কারণ, করোনাকালে প্রত্যেকের সুস্থ থাকা এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চারজনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন।
'বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮'-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।
হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
দু'টি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় - যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার।
প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি।
কারও ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।
অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়।
যদিও বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে ব্যক্তির হৃতপিণ্ড কাজ বন্ধ করতে পারে বা হার্ট ফেল করতে পারে।
এছাড়া, এমন সময় রক্তনালীর দেয়াল সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
আর বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে একজন মানুষ অন্ধত্বও বরণ করতে পারেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা আনোয়ার জানান যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্দিষ্ট করে জানা যায় না।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "যাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয় না, তাদের ক্ষেত্রে সেটিকে প্রাইমারি বা এসেনশিয়াল ব্লাড প্রেশার বলা হয়ে থাকে।"
"উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, অনেক সময়ই উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষ্মণ দেখা যায় না। লক্ষ্মণ না থাকলেও দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং রোগী হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তার মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।"
অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বয়স ৪০ হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অন্তর ব্লাডপ্রেশার মাপা দরকার বলে মন্তব্য করেন মিজ আনোয়ার।
আর যারা দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের প্রতি সপ্তাহে একবার প্রেশার মেপে দেখা উচিত।
তবে একবার রক্তচাপ বেশি দেখা গেলেই যে কারও উচ্চ রক্তচাপ আছে, সেটা বলা যাবে না।
পর পর তিন মাস যদি কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, তখনই বলা যাবে যে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ঘুমাতে যাবার আগে গ্রহণ করলে সেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয় বলে উঠে আসে ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায়
উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ: কেন হয়, লক্ষণ ও কমানোর উপায়
জীবনযাপনে পরিবর্তন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে:
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com