কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৫তম কোপা ঘরে তুলেছে লিওনেল মেসিরা। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে কোপা তথা বড় কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছিল তারা।
রোববার বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই জমে উঠে সুপার ক্লাসিকো। দু’দলের কেউই ছাড় দেয়নি একে অপরকে। তবে শুরুর দিকে বলের নিয়ন্ত্রণ থাকে আর্জেন্টিনার কাছে। এতে বল দখল করতে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি ফাউলও দেখা যায় প্রথম দশ মিনিটে। ফলে ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের ফ্রেড। মন্তিয়েলকে ফাউল করার জন্য রেফারি কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন তাকে।
বলের নিয়ন্ত্রণ আর্জেন্টিনার কাছে থাকলেও মাঝ মাঠেই বল নিয়ে ঘুরতে থাকে দুই দল। কোনো দলই ডি-বক্সে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছিলো না। তবে বেশিরভাগ সময় মাঝমাঠে বল ঘুরতে থাকা আর্জেন্টিনা ম্যাচের ২১তম মিনিটে স্বাগতিকদের হতবিহ্বল করে দেয়। নিজেদের অর্ধ থেকে রদ্রিগো ডি পলের লম্বা পাস খুঁজে পায় দ্রুতগতির ডি মারিয়াকে। ক্ষিপ্রতার সাথে দৌড়ে বল রিসিভ করে এগিয়ে আসা ব্রাজিল গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় জাল খুঁজে নিতে ভুল করেননি ম্যাচের শুরু থেকে মাঠে নামা মারিয়া। এই গোলে ফাইনালের প্রথম একাদশে ডি মারিয়াকে ফিরিয়ে তার ওপর যে আস্থা দেখিয়েছেন কোচ স্কালোনি, তার যথাযথ মর্যাদা দিয়েছেন এই পিএসজি ফরওয়ার্ড।
গত বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার হয়ে তার প্রথম গোল এটি। ২০০৫ কনফেডারেন্স কাপের ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো ফাইনালে গোলের দেখা পেলো আলবিসেলেস্তেরা।
ডি মারিয়ার এক গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতি থেকে ফিরে এসে সমতায় ফিরে ব্রাজিল। তবে সেই সমতায় ফেরানো গোল বাতিল হয়ে যায় আফসাইডের কারণে। খেলার ৫২ মিনিটে রিচার্লিসন বল জড়িয়েছিলেন আর্জেন্টিনার জালে। কিন্তু বলের যোগানদাতা পাকুয়েতা অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় সেই গোল।
এর ৩ মিনিট পর আবারও সুযোগ পায় ব্রাজিল। এবার আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের সেভে রক্ষা পায় আকাশি নীলরা। ডান দিক থেকে নেইমারের বাড়ানো বলে শট নিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মার্টিনেজকে ফাঁকি দিতে পারেনি সেই শট।
৮৫ মিনিটের মাথায় নেইমারের কর্ণার কিক থেকে হেডে গোল শোধ করার চেষ্টা করেন থিয়াগো সিলভা। তবে তার হেডার ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় যোগ করে রেফারি। অতিরিক্ত সময়ের ৩ মিনিটের মাথায় উলটো দ্বিতীয় গোল হজম করতে যাচ্ছিলো তিতে শিষ্যরা। ৯৩ মিনিটে ডি’পলের আক্রমণ প্রতিহত করে দেয় ব্রাজিল গোলকিপার এডারসন। কিন্তু শেষমেশ আর কোনো গোল না হওয়ায় পরম আরাধ্য শিরোপার দেখা পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
তবে ম্যাচজুড়ে বল দখল ও আক্রমণের দিক থেকে এগিয়ে ছিল ব্রাজিলই। খেলার ৫৯ ভাগ বল ছিল সেলেসাওদের কাছে। ব্রাজিলের অনটার্গেটে ২টি শটের বিপরীতে আর্জেন্টিনার শট ছিল মাত্র ১টি। অন্যদিকে, ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠা ম্যাচে মোট হলুদ কার্ড দেখানো হয় ৯টি।
এই জয়ে ২৮ বছর পর কোনো শিরোপা জিতলো আলবিসেলেস্তারা। সেই সাথে জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা না জেতার আক্ষেপ ঘোচালো বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।
আর্জেন্টিনা একাদশ : দামিয়ান মার্টিনেজ, ওটামেন্দি, আকুনা, মন্টিল, রোমেরো, দি পল, পেরেসিস, লো সেলসো, মেসি, দি মারিয়া, লাউতারো মার্টিনেজ।
ব্রাজিল একাদশ: এডারসন, থিয়াগো সিলভা, ড্যানিলো, মারকুইনহোস, রেনান লোদি, ক্যাসেমিরো, ফ্রেড, এভারটন, লুকাস পাকুয়েতা, রিচার্লিসন, নেইমার।