রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে যে বিতর্ক, সেটি নিরসনে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। আজ বৃহস্পতিবার সংসদে এমন দাবি তোলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ । ‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস বিল, ২০২১’-এর ওপর আলোচনায় তিনি এ দাবি তোলেন।
কে এম খালিদ বলেন, ‘সংসদ ভবন নিয়ে লুই কানের যে নকশা, সেখানে কোথায় রয়েছে যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন করতে হবে ? সেখানে মরদেহ আছে কি না, সেটি নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। বেগম জিয়া স্বামী মনে করে কাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান ? বেগম জিয়ারই উচিত এই প্রশ্ন তোলা—ওনার স্বামীর লাশ সেখানে আছে কি না। বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে এর নির্ণয় হওয়া উচিত। আপনারা দলের নেতা ভেবে কাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন? ওখানে কি কারও লাশ আছে ? নাকি অন্য কারও লাশ আছে ?’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সাংসদ বলেছেন, সঠিক ইতিহাস আসতে নাকি শত বছর লাগে। মৃত্যুর ৪০ বছর পরে সঠিক ইতিহাস বের হলে সমস্যা কোথায়? জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নাই, এটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ব্যবস্থা আছে। আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদ্ঘাটনে ভয়ের কী আছে?’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের দলের নেত্রীকে বলেন। যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় সাজা স্থগিত নিয়ে বসবাস করছেন। আইনের সুযোগ থাকলে তাঁর নেতৃত্বে কমিটি করেন।’
বিএনপির দলীয় সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তাঁর বক্তব্যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগও ছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জিয়ার জানাজা হয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগও উপস্থিত ছিল। শোকপ্রস্তাবের ওপর তখন সংসদে দীর্ঘ আলোচনায় তাঁরা অংশ নিয়েছিল।’
হারুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘কারও যদি অপমৃত্যু হয় তাহলে তাঁর ময়নাতদন্ত লাগে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সামরিক আদালতে বিচারও হয়েছে। এটা অসত্য কিছু নয়। আজকে জেনারেল এরশাদ বেঁচে থাকলে তিনি লজ্জা পেতেন। লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকতেন।’
বিএনপির আরেক সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আর্কাইভস যদি করতে হয়, তাহলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন বীর উত্তম, এটা স্বীকার করেতে হবে। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। ওনারা ওনাদের কথা বলবেন। আর আমরা আমাদের কথা। এইটুকু ধৈর্য যদি তাঁদের না থাকে, তাহলে তাঁরা কী ইতিহাস লিখবে? চর্চা করবে? আর্কাইভসে কী জমা সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি।’
৪০ বছর পরে কেন জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে এই বিতর্ক উল্লেখ করে রুমিন বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিতর্ক করা হচ্ছে।’
রুমিন ফারহানার বক্তব্যের শেষের দিকে সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সরকারদলীয় সদস্যরা রুমিন ফারহানার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন।
বিএনপির আরেক সাংসদ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সেখানে যে লাশ নেই, সেটি আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এত বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। এটা নিয়ে আগে কথা বলেননি কেন? এখন কেন বলছেন?’
জাতীয় পার্টির সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতি তো বিএনপিও করে। তারা বলে, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে কখনোই বলতে শুনিনি, দেখিনি উনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন। বিএনপিকে প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে, সেটা বন্ধের আহ্বান বিএনপি জানাতে পারে।’