ময়মনসিংহ সংবাদদাতা ।। দীর্ঘ ১০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মুনসুর আলী তার মা বাবার কাছে ফিরে এসেছেন। ছয় মাস বয়সের রেখে যাওয়া সন্তান তামিম পেয়েছে তার বাবাকে। এ নিয়ে খুশির বন্যা বইলেও মুনসুরের জীবনে ঘটেছে এক নির্মম ট্র্যাজেডি। নিরুদ্দেশ হওয়ার পর স্বামীর ফিরে না আসায় গত এক বছর আগে মুনসুরের স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন।
এই ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের হিজলজানী গ্রামে।
সরজমিনে জানা যায়, দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান মুনসুর আলী (৩৫)। নিজেদের কৃষিজমিসহ অন্যের জমিতে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে দিনানিপাত করে যাচ্ছিলেন। প্রায় ১০ বছর আগে ঢাকা গিয়ে হঠাৎ একদিন নিখোঁজ হন তিনি। এরপর বৃদ্ধ বাবা শান্ত মিয়া ও লতিফা খাতুন সন্তানকে ফিরে পেতে সাধ্যমত অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। ঘুরেছেন পীর ফকিরের দরবারেও।
এরমধ্যে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থেকে ধারণ করা একটি ইউটিউব চ্যানেলে জীবনের গল্পের ভিডিওচিত্রে দেখা যায় মুনসুর আলী ভবঘুরে অবস্থায় সেখানে রয়েছেন। সেই সূত্র ধরে মুনসুর আলীর ছোট ভাই জাহাঙ্গীর ও তার ভাতিজা ঈশ্বরদীতে যান ৩০ আগস্ট। সেখানে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তার খোঁজ পান তারা। মানসিক সমস্যা থাকলেও মুনসুর তার ছোটভাইকে চিনতে পারেন।
স্থানীয়রা জানান, ওই লোককে তারা মন্টু মামা বলে ডাকতেন। তিনি নিজের খেয়ালখুশি মত চলতেন। এখানে তাকে তিন বছর ধরে দেখা যায়। রাতে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটে দিনানিপাত করতেন।
মুনসুর আরীর বাবা শান্ত মিয়া বলেন, আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এরপরও মুনসুরকে আমরা কিছুতেই ভুলতে পারিনি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের এতদিনের প্রার্থনা ছিল ছেলেটাকে যেন ফিরে পাই। মুনসুর কিছুটা সুস্থ এখন। তাকে পুরোপুরি সুস্থতার জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে মুনসুরের স্ত্রী চম্পা ৯ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার স্বামীর জন্যে অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু গত বছর সে অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন। শেষ মুহূর্তে এ ঘটনাটি আমার ছেলে ও নাতির জন্যে বেদনার হয়ে গেল।
স্ত্রী চলে যাওয়ায় মুনসুর আলী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সে তো অনেক অপেক্ষা করেছিল। আর কিছুদিন ধৈর্য্য ধরলে এমনটা হত না। তিনি বলেন, আমার মা-বাবা, সন্তান, ভাই-বোন ও স্বজনদের ফিরে পেয়ে আমি এখন ভীষণ খুশি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com