টস জয় তো ম্যাচ জয়! এবারের বিশ্বকাপে এটিই হয়ে আসছিল। বিশেষ করে দুবাইয়ে। এই ভেন্যুতে ১২ ম্যাচের ১০ টিতেই যে টস জয়ী দল জয় নিয়ে ফেরে। ফাইনালেও তাই টস জিতে বোলিং নিতে দুইবার ভাবেননি অ্যারন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের সেই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে অজিরা। আসল বিশ্বকাপে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আক্ষেপটা শেষ পর্যন্ত ঘুচেছে মিচেল মার্শ-ডেভিড ওয়ার্নারদের হাত ধরে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ১৭৩ রানের বড় সংগ্রহই দাঁড় করিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তবে কিউইদের এই লক্ষ্য পেরিয়ে যেতে খুব একটা বেগই পেতে হয়নি অজিদের। যদিও শুরুতে বিপদের শঙ্কা জাগিয়ে বিদায় নেন ফিঞ্চ। সেমিফাইনালের পর ব্যাটিংয়ে আরেকবার ব্যর্থ ফিঞ্চ ফিরে গেছেন ৫ রান করে। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অজিদের ম্যাচে রাখার সঙ্গে ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদির হতাশা বাড়িয়ে যান ওয়ার্নার-মার্শ।
সেমিফাইনালের পর আরেকবার ব্যাটিংয়ে জ্বলে ওঠেন ওয়ার্নার। তিনে নামা মার্শের সঙ্গে গড়ে তোলেন ৯২ রানের জুটি। সেমিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক রানের জন্য ফিফটি মিস করলেও আজ ৫৩ রান করে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ভিত গড়ে দেন ওয়ার্নার। এই বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ের অস্ট্রেলিয়ার আশার আলো হয়ে টিকে ছিলেন মার্শ। মিডলঅর্ডার থেকে উঠে এসে এ বছর তাঁকে তিনে খেলাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের প্রথম দিকে একাদশে জায়গা না পেলেও সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই দুই হাত পুরে নিয়েছেন মার্শ।
তৃতীয় উইকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আরও কোনো বিপদ বাড়তে দেননি মার্শ। দুজনের আরেকটি দুর্দান্ত জুটিতে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে। দুজনের অমীমাংসিত জুটি থেকে আসে ৬৬ রান। মার্শ ৫০ বলে ৭৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১৮ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মার্শের সঙ্গী ম্যাক্সওয়েল।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করা নিউজিল্যান্ড সাবধানী শুরু করে। ২ ওভার শেষে সংগ্রহ ছিল-১৩ /০। তৃতীয় ওভারে এসেই খোলস ছেড়ে বেরোন দুই ওপেনার। প্রথম বলেই ম্যাক্সওয়েলকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে অভ্যর্থনা জানান সেমিফাইনালের নায়ক ডেরিল মিচেল। ওই ওভারে আসে ১০ রান। তবে সেমিফাইনালের নায়ক মিচেলকে ১১ রানে হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে কিউইরা। উইকেট না পড়লেও রান তুলতে সংগ্রাম করেছেন কেন উইলিয়ামসন–গাপটিল জুটি।
ইনিংসের নবম ওভারে এসে হাত খুলতে শুরু করেন উইলিয়ামসন। মিচেল মার্শকে টানা দুই চারে শুরু করেন ঝড়। ১১ তম ওভারে এসে তো আরও বিধ্বংসী কিউই অধিনায়ক। স্টার্ককে তুলোধুনা করে তুলে নেন ১৯ রান। অবশ্য ওই ওভারে ২১ রানে ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন উইলিয়ামসন। সেই জীবন পেয়ে আরও দুরন্ত কিউই অধিনায়ক।
১২তম ওভারের প্রথম বলে গাপটিল ফিরলেও অবশ্য তেমন একটা সমস্যা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। অন্য প্রান্তে যে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দিচ্ছিলেন উইলিয়ামসন। ১৩তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলকে টানা দুই ছক্কায় ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন। নম্র চেহারার উইলিয়াসন তো অজিদের সামনে রুদ্ধ মূর্তি ধারণ করেছেনই, তাঁর সঙ্গে অন্যপ্রান্তে যোগ দেন এ বছর সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারা গ্লেন ফিলিপসও। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে মিলে গড়েন ৩৭ বলে ৬৮ রানের জুটি।
ফিলিপস-উইলিয়ামসনের ঝড়টা বেশি গেছে স্টার্কের ওপর দিয়ে। বাঁহাতি পেসার প্রথম তিন ওভারেই দেন ৫০ রান। ১৮তম ওভারে ফিলিপস (১৮) ও উইলিয়ামসনকে (৪৮ বলে ৮৫) ফিরলেও নিউজিল্যান্ড ১৭৩ রানের বড় লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছিল। তবে সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ঢাকা পড়ে যায় ফাইনাল হারে। প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও যে সেটাকে শিরোপা দিয়ে রাঙাতে পারলেন না উইলিয়ামসনরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com