মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের তৈরি করাবড়ি/পিলকরোনা ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড রোগীদের মৃত্যু বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৮৯% পর্যন্ত কমিয়ে আনে বলে ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রমান পাওয়া গেছে ।
ফাইজারের ‘প্যাক্সলোভিড’ নামের ঐ ওষুধটি উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের কোভিডের উপসর্গ দেখা যাওয়ার পরই ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ঔষধ প্রশাসন ঔষধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মের্ক শার্প অ্যান্ড ডোহমে’র (এমএসডি) একই ধরণের একটি ওষুধ কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার পরদিন ফাইজারের এই ঔষধ সংক্রান্ত গবেষণা তথ্য জানা গেল।
ফাইজার জানিয়েছে, প্রাথমিক ফলাফলে আশাতীত সাফল্য দেখতে পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা ট্রায়াল বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে ফাইজারের এই নতুন ঔষধের আড়াই লাখ কোর্স কেনার জন্য আদেশ দিয়েছে, যদিও এটিকে এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। পাশাপাশি এমএসডি’র মলনুপাইরাভির পিলের ৪ লাখ ৮০ হাজার কোর্স কেনার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
ফাইজারের নতুন এই ওষুধ, যেটি একধরণের ‘প্রোটিজ ইনহিবিটর’, কোভিড ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় একটি এনজাইমকে বাধা দেয়। এর সাথে যখন রিটোনাভির নামের আরেকটি পিলের স্বল্পমাত্রার ডোজ নেয়া হয়, তখন এটি দেহে দীর্ঘতর সময়ের জন্য অবস্থান করে।
এই ঔষধের ক্ষেত্রে প্রতিদিনে দু’টি করে পিল গ্রহণ করতে হয় পাঁচদিনের জন্য।
এমএসডি’র পিলের সাথে এই রিটোনাভির কিছুটা ভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। এমএসডি’র পিলটি ভাইরাসের জেনেটিক কোডে ত্রুটি প্রবেশ করায়।
তবে এমএসডি বা ফাইজার, কোনো প্রতিষ্ঠানই এখন পর্যন্ত ট্রায়ালের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করেনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে ফাইজারের ওষুধের লক্ষ লক্ষ ডোজ নিশ্চিত করে রেখেছে।
ফাইজারের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী অ্যালবার্ট বোরলা বলেছেন যে ‘রোগীদের জীবন বাঁচানোর পিলটির সম্ভাব্য ক্ষমতা রয়েছে, এবং ১০টির মধ্যে ৯টি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা থামাতে সক্ষম।’
ট্রায়ালের ফলাফল
কোভিডের টিকাকে এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে এই মহামারি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। তবে বাড়ি করা যায় এমন চিকিৎসার চাহিদা আছে – বিশেষ করে যেসব রোগী উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তাদের জন্য।
ট্রায়াল চলাকালীন উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সম্প্রতি কোভিড সংক্রমিত হওয়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১,২১৯ জন রোগীর মধ্যে যাদের প্যাক্সলোভিড দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ০.৮% শতাংশকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। প্লাসেবো বা অন্য কোনো পিল যেসব রোগীদের দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার ছিল ৭%।
কোভিড উপসর্গ দেখা যাওয়ার তিন দিনের মধ্যে তাদের চিকিৎসা শুরু হয়।
কোভিড উপসর্গ দেখা দেয়ার পাঁচদিনের মধ্যে যাদের প্যাক্সলোভিড দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ১% রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে এবং কেউ মারা যাননি। বিপরীতে ডামি পিল দেয়া ৬.৭% রোগীকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে এবং ঐ দলের ১০ জন মারা যান।
কোভিডের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হতে পারে – বয়স্ক অথবা আগে থেকেই কঠিন রোগ থাকা – এমন ব্যক্তিদের এই ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। তাদের সবারই কোভিড উপসর্গ ছিল অতি সামান্য থেকে মাঝারি মাত্রায়।
কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন, তাই কোভিড প্রতিরোধে একসাথে দু’টি ওষুধ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি মনে করা হচ্ছে।
ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী থেকে ভাইরাস অনেক নিরীহ জীবাণু। তবে ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর চেয়ে ভাইরাস প্রতিহত করা অপেক্ষাকৃত কষ্টসাধ্য। আামাদের দেহে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস বিভিন্নভাবে আক্রমণ করে।
এছাড়া ভাইরাস আমাদের দেহের কোষের ভেতরে লুকিয়ে থাকতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে কার্যকর ওষুধ অনেকসময় শরীরে সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।
এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ফাইজারের এই নতুন পিলের সাফল্য যতটা পরিলক্ষিত হয়েছে, বাস্তবে এটি ততটা সফল হয় কি না।