জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ রয়েছে বাস-ট্রাক-লরি চলাচল।
তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ছোট ছোট যানবাহনে গন্তব্যে ছুটছেন তারা। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। মালিক-শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত কেন্দ্রীয় নেতারাও। ভাড়া সমন্বয় না করে শুধু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলছেন তারা।
প্রতি লিটারে ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধির পর গতকাল বিভাগীয় ও জেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন আজ থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়।
উল্লেখ্য বুধবার জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম প্রতি লিটার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজার মূল্য প্রতি লিটার ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রূপি ছিল। অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ লিটার প্রতি ৫৯.৪১ টাকা কম।
হঠাৎ গণপরিবহণ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও শুক্রবার বন্ধের দিনে অনেকে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে রাস্তায় পড়েছেন হঠাৎ বিপদে । অনেকে গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন। দুই একটি সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া গেলেও ভাড়া হাঁকছে কয়েকগুণ বেশি। ফলে জাত্রি-চালকদের মধ্যে বাঁধছে দন্দ ।
এভাবে তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা যায়, তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহার অথবা বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন পরিবহণ মালিকরা। তারা করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহণ খাতের লোকসান, যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধির মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দু-একদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসার আলোচনা চলছে।
তেলের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পরিবহণ নেতারা বলেন, হঠাৎ করেই একসঙ্গে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘটনা এটাই প্রথম। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতে বাস ও ট্রাকের প্রতি ট্রিপেই খরচ বেড়ে গেছে কয়েক হাজার টাকা। এর মাশুল গুনতে হবে সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। এদিকে হঠাৎ করে গণপরিবহণ বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন চাকরি প্রার্থীরা। শুক্রবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা রয়েছে। এসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের যারা রাজধানীতে এসেছেন, তারা গণপরিবহণ বন্ধ থাকলে ফিরতে পারবেন না। আবার যারা সকালে গণপরিবহণে আসার পরিকল্পনা করেছেন, তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে গণপরিবহণ তিন মাস বন্ধ ছিল। ওই লোকসান এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে হঠাৎ প্রতি লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে মালিকদের মাথায় বজ্রপাতের মতো হয়েছে। তারা এটা সহ্য করতে পারছেন না। তিনি বলেন, এভাবে দাম বাড়ানোর কারণে প্রতি ট্রিপে কয়েক হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। এর প্রতিবাদে মালিকরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা জানি না। তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
দুটি সেতুর টোল ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পণ্য পরিবহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ।
তেজগাঁও সংগঠনের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় নেতারা বলেন, দুই বছর করোনার দীর্ঘ মেয়াদের প্রভাবের কারণে বেশির ভাগ পরিবহণ বন্ধ ছিল। এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তেলের দাম বাড়িয়ে পরিবহণ মালিকদের ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বাড়বে।
এর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহণ বন্ধ রাখা হবে। সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তুম আলী খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার, সদস্য সচিব তাজুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে বাস মালিকরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ধর্মঘট ডাকা না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। তেলের দাম বাড়ায় বাস চালিয়ে লোকসান হবে বলে মনে করছেন মালিকরা। তারা বাস চালাতে রাজি নন।