অস্ট্রেলিয়া কত রানে হারবে- এই সমীকরণে যখন বুঁদ দুবাইয়ের গ্যালারি, ম্যাথু ওয়েডের পরপর তিনটি ছক্কা ঠিক তখনই পাকিস্তানি সমর্থকদের বুকে পেরেকের মতো আঘাত করেছিল। তখনই তারা বিশ্বাস করেছিল যে, পাকিস্তানের টি২০ বিশ্বকাপযাত্রা সত্যি সত্যিই শেষ হয়ে গেছে। আগের দিন যে কৌশলে নিউজিল্যান্ড ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল, গতকাল ঠিক একইভাবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। খাদের কিনারা থেকে অসিরা ম্যাচ জিতে নেয় ৫ উইকেটে।
আবেগ নয়, চূড়ান্ত পেশাদারিত্ব দেখিয়েই রোববারের ফাইনালের মুখোমুখি হচ্ছে তাসমান পাড়ের দুই দেশ নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া। সেইসঙ্গে এবারের বিশ্বকাপে বিদায় হয়ে গেল এশিয়ারও। ১৪ নভেম্বর যে-ই জিতুক, ক্রিকেট বিশ্ব পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর এগিয়ে এসেছে। কালই আসছে বাবর আজমের দল।
আবুধাবিতে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড প্রথম সেমিফাইনালের মতোই সমাপ্তি হয়েছে গতকাল পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ চার ওভারে কিউইদের প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। জিমি নিশাম ঝড়ে সেই রান এক ওভার হাতে রেখে তুলে নেয় ব্ল্যাক-ক্যাপসরা। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ২৪ বলে ৫০ রান। মার্কোস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েডের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ছয় বল বাকি থাকতে অস্ট্রেলিয়াও টপকে যায় পাকিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ১৭৭ রানের টার্গেট। অথচ ৯৬ রানে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে আউট করা পাকিস্তান জয়ের ক্ষণ গুনছিল। দ্রুত উইকেট হারানোয় অসিদের প্রয়োজনীয় রান রেটও বাড়তে থাকে। স্টয়নিস ও ওয়েড দেখেশুনে ব্যাট করতে থাকেন। আলগা বল পেলেই বাউন্ডারি মেরেছেন তারা। ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় হাসান আলির করা ১৮তম ওভার থেকে। ৩ ওভারে ৩৭ রানের সমীকরণে হাসানের ওভার থেকে আসে ১৫ রান। বোলিংয়ে বড় ভরসা শাহিন আফ্রিদির এক ওভার থাকায় আশায় বুক বাঁধেন পাকিস্তান সমর্থকরা। দুই ওভারে ২২ রানের সমীকরণও কঠিন হয়ে যেত যদি আফ্রিদির চতুর্থ বলে ওয়েডের ক্যাচ ফেলে না দিতেন হাসান আলি।
জীবন পাওয়া ওয়েডই টানা তিন ছয় মেরে ম্যাচটি শেষ করে দেন। খরুচে বোলিং করার সঙ্গে ক্যাচ ফেলে দেওয়া হাসান আলি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। হারের দায়টা যে তার কাঁধেই বেশি, সেটা উপলব্ধি করেছেন তিনি। তবে কৃতিত্ব দিতে হবে ওয়েড ও স্টয়নিসকে। ষষ্ঠ উইকেটে ৬.৪ ওভারে তাদের অবিচ্ছিন্ন ৮১ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যায় টি২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ফাইনালে। ওয়েড ৪১ এবং স্টয়নিস ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের ১৭৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নামা অস্ট্রেলিয়া প্রথম ওভারেই হারায় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে। শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠা অসিরা ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে এগোতে থাকে। রান রেট সচল রেখে ব্যাট করতে থাকা অসিরা প্রথম ১০ ওভারে ভালোভাবে ম্যাচে ছিল। ড্রিংকস ব্রেকের পরই ছন্দপতন হয় তাদের। শাদাব খানের করা ইনিংসের ১১তম ওভারের প্রথম বলে ৪৯ রান করা ওয়ার্নার রিজওয়ানের হাতে ধরা পড়েন। তবে পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল ওয়ার্নারের ব্যাটে লাগেনি। রিভিউ নিলে বেঁচে যেতে পারতেন এ ওপেনার। তখন সবাই ধরে নিয়েছিল, এটাই হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার হারের বড় কারণ। কিন্তু ওয়েড আর স্টয়নিস সব অনিশ্চয়তা উড়িয়ে দিয়ে দুবাইয়ে ওড়ালেন অস্ট্রেলিয়ার পতাকা।
ওয়েড আর স্টয়নিস এর টারনিং পয়েন্ট ঝোড়ো ব্যাটিং
এ নিয়ে দুবাইয়ে শেষ ১২ ম্যাচের ১১টিতেই জিতেছে পরে ব্যাট করা দল। এ মাঠের পরিসংখ্যান জানেন বলেই টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। স্লো পিচে শুরুতে দাপট দেখান পাকিস্তানের দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। অস্ট্রেলিয়ার পেসার-স্পিনারদের বিপক্ষে নিখুঁত ব্যাটিং করেন বাবর। তবে মোহাম্মদ রিজওয়ান ছটফট করতে থাকেন। দু’বার জীবন পান এ ওপেনার। আগের পাঁচ ম্যাচে চার ফিফটি হাঁকানো বাবর এদিন থামেন হাফসেঞ্চরি থেকে ১১ রান দূরত্বে। পাকিস্তান অধিনায়ক না পারলেও জীবন পাওয়া রিজওয়ান ঠিকই ফিফটি তুলে নেন। ৬৭ রান আসে এ ওপেনারের ব্যাট থেকে। বাবর-রিজওয়ানের ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। দুই ওপেনারের উড়ন্ত সূচনার পর শেষ দিকে ফখর জামানের ঝোড়ো ফিফটিতে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে। ৪০ রানে জীবন পাওয়া ফখর ৩২ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করেন। প্রথম ১০ ওভারে ৭১ রান তোলা পাকিস্তান শেষ ১০ ওভারে সংগ্রহ করে ১০৫ রান। কিন্তু সব কিছুই ম্লান হয়ে গেছে ওয়েড-স্টয়নিসের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে।