ঢাকা: জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে নতুন করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। পুনঃনির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী এখন থেকে মহানগরীতে বাস যাত্রায় যাত্রীদের গুনতে সর্বনিম্ন ৮ টাকা এবং মিনিবাসের জন্য গুনতে হবে ১০ টাকা।
এদিকে দূরপাল্লার গণপরিবহনের ভাড়া ১ দশমিক ৮০ টাকা বৃদ্ধি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।
রোববার (৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টাব্যাপী বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। তাদের সাত ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে যেসব বাস সিএনজি চালিত সেগুলো এই নতুন ভাড়ার তালিকায় পরবে না। সিএনজি চালিত বাস আগের ভাড়ায় চলবে।
তিনি আরও বলেন, এই ভাড়া সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হবে। রোববার রাতেই এ সংক্রান্ত গ্যাজেট প্রস্তুত করা হবে এবং সোমবার তা প্রকাশ করা হবে।
বৈঠকে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতা খন্দকার এনায়েতউল্লাহ, শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ ঘোষ, সোহাগ পরিবহনের মালিক ফারুক তালুকদার, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দুই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ডিজেল-কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশে গত তিনদিন ধরে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। পরিবহন মালিকরা শুরু থেকেই ভাড়া সমন্বয় বা ডিজেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কারণে গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিআরটিএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হয়। এর পরদিনই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ৫ নভেম্বর (শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে বাস-ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। তাদের দাবি ডিজেলের দাম না কমানো হলে গণপরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করতে হবে।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সারাদেশে ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, বাসের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়াতে ধর্মঘট দিয়ে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করলেও সরকার তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভাড়া বাড়াতে চাপ তৈরির কৌশল হিসেবেই পরিবহন সিন্ডিকেট ধর্মঘট করেছে।
এরই মধ্যে ধর্মঘটের প্রথমদিন গত শুক্রবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জোনালেও গত দুদিনেও সাড়া মেলেনি। ওই দিন ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, রোববার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে ভাড়া সমন্বয় করে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ যতটা সম্ভব সহনীয় রাখার চেষ্টা করা হবে।