মারাত্মক না হলেও সংক্রমণ সক্ষমতার কারণে এরই মধ্যে সারা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। এবার রঙিন, ফ্যাশনেবল এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের মাস্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসের অধ্যাপক ট্রিশ গ্রিনহালঘ বলেন, কোন ফ্যাব্রিক ব্যবহার করা হয় তার ওপর নির্ভর করে এগুলো সত্যিই করোনাভাইরাস বিস্তারের বিরুদ্ধে কার্যকর নাকি ঝুঁকিপূর্ণ।
গ্রিনহালঘ বলেন, একাধিক উপকরণের মিশ্রণে তৈরি দুই বা তিন স্তরের মাস্কগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর হতে পারে। তাঁর মতে, বেশির ভাগ কাপড়ের মাস্কগুলো কেবলই ‘ফ্যাশনের জিনিস’।
নভেল করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন অত্যন্ত সংক্রামক। এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কোভিড সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বিস্তার রোধে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করছে সরকারগুলো। চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্রিটেন গণপরিবহন, দোকান এবং কিছু ইনডোর ভেন্যুতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নির্দেশনা দিয়েছে। যেখানে গ্রীষ্মে স্বাস্থ্যবিধি অনেক শিথিল করা হয়েছিল।
একই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রেও। আসছে ইংরেজি নববর্ষ ও বড়দিনে কতখানি কঠোরতা আরোপ করা হবে তা নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা কিছুটা দ্বিধায় আছেন। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞরা কাপড়ের মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় জোরালো করলেন।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের চিকিৎসা বিশ্লেষক ড. লিয়ানা ওয়েন বলেন, ওমিক্রনের বিস্তার রোধে কাপড়ের মাস্ক কোনো কাজেরই নয়। বরং তিনি জনগণকে তিন স্তরের মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে চান। তবে সেই সঙ্গে ইংরেজি নববর্ষ ও বড়দিনের উৎসব ম্লান করে দেওয়ার মতো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষেও নন তিনি।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ওয়েন বয়স্ক বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। সাক্ষাতের পরিকল্পনার আগে করোনা পরীক্ষা এবং অন্তত তিন দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বুস্টার ডোজসহ টিকা নেওয়া এবং সঠিক মাস্ক পরতে বলেছেন ড. ওয়েন।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক ফেলো অ্যাশলি স্টিকজিনস্কি গত অক্টোবরে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেছিলেন, কাপড়ের মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে খুব কম গবেষণা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একাধিক ল্যাবরেটরিতে মাস্কে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাপড়ের জীবাণু আটকানোর সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে, কাপড় বা ফ্যাব্রিক অ্যারোসল আকারের বস্তুকণার মাত্র ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ঠেকিয়ে দিতে পারে। কোভিড-১৯-এর বায়ুবাহিত সংক্রমণ ঘটে এই অ্যারোসলের মাধ্যমেই। যেখানে ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, এন৯৫ বা অন্যান্য সার্জিক্যাল মাস্ক অ্যারোসল আকারে বস্তুকণা প্রায় ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিতে পারে।’
ডুভাল কাউন্টি মেডিকেল সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. সুনীল যোশি বলেন, ‘কাপড়ের মাস্ক সব সময় ভালো বিকল্প হতে পারে না। এখানে ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে ঝুঁকির মাত্রাটা কতখানি সেটা বলা মুশকিল। যেখানে এন ৯৫ বা কে৯৫ মাস্কের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য উপাত্ত আমাদের হাতে আছে।’
তবে ভালো মতো বস্তুকণা ঠেকিয়ে দেওয়ার গুণাগুণ থাকলেও মাস্কটি অকার্যকর হতে পারে যদি সেটি নাক ও মুখ ঠিকঠাক না ঢাকে। আবার সেই সঙ্গে তো স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসও নিতে পারতে হবে। গ্রিনহালঘ বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব বা সামর্থ্যের কথা ভেবে মানুষ কাপড়ের মাস্ক বেছে নেন। কারণ এটি বারবার ধুয়ে পরা যায়। কিন্তু অ্যারোসলের মতো বস্তুকণা ঠেকিয়ে দিতে পারে এমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাস্ক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কানাডীয়দের কিন্তু এরই মধ্যে এক স্তরের কাপড়ের মাস্ক না পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
গ্রিনহালঘ বলছেন, ‘কাপড়ের মাস্কের প্রধান সমস্যা হলো, এগুলো এটি কোনো ধরনের স্বাস্থ্য মান পূরণ করে না। বিপরীতে, যারা এন ৯৫ মাস্ক তৈরি করেন, তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এটি ৯৫ শতাংশ কণা ফিল্টার করতে পারে।’
অন্টারিওর সায়েন্স অ্যাডভাইজরি টেবিলের প্রধান পিটার জুনি গত সপ্তাহে সিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখানে সমস্যা হলো, আপনার এক স্তরের মাস্কের ফিল্টার সক্ষমতা একেবারের কম। বাস্তবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই মাস্ক পরা না পরা একই কথা।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com