বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসরের পর্দা উঠবে আজ শুক্রবার। করোনার কারণে এক বছর বিরতি দিয়ে গ্যালারি ভর্তি দর্শক নিয়েই মাঠে গড়ানোর কথা ছিল কুড়ি ওভারের এই টুর্নামেন্টের। তবে হুট করেই আবারও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দর্শকবিহীনভাবেই মাঠে গড়াচ্ছে এবারের আসর। এতে করে জৌলুস কিছুটা কমলেও শেষ পর্যন্ত সকল শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে টুর্নামেন্টটি, এটাই স্বস্তি সংশ্লিষ্টদের মনে।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এবারের আসর রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৭ দিনে মাঠে গড়াবে ৩৪ ম্যাচ। উদ্বোধনী দিনে মাঠে গড়াচ্ছে দুটি ম্যাচ। এদিন দুপুর দেড়টায় সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল মুখোমুখি হবে মেহেদি হাসান মিরাজের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স খেলবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টস।
ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বিপিএল মানেই বিতর্ক আর অসংলগ্নতার ছড়াছড়ি। ২০১২ সালে বিপিএল মাঠে গড়ানোর পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দলের নিলাম, খেলোয়াড় নিলাম থেকে শুরু করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাক লাগিয়ে দেয় বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিপিএল যেন বর্ণহীন হয়ে পড়েছে! ২০১২ সালের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন দলকে ২ কোটি টাকা প্রাইজমানি দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় একটি গাড়ি।
বিপিএলের প্রথম দুই আসরে এমন চিত্র দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাইজমানিও কমেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে দুই কোটি টাকা প্রাইজমানি পেয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে রাজশাহী চ্যাম্পিয়ন হলেও কোনও প্রাইজমানি পায়নি। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন দলকে ১ কোটি টাকা এবং ৫০ লাখ টাকা রানারআপকে দেওয়ার ঘোষণা করেছে বিসিবি। এতেই বোঝা যায়, বিপিএলের মান কতটা নিচের দিকে নামছে। এ বছর বিপিএল আয়োজনের পরই আবার দীর্ঘ মেয়াদের জন্য দল খুঁজবে বিসিবি। বিসিবির পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বিশ্বাস, পরবর্তীতে আসর থেকে বিপিএল হবে গোছানো, পরিপাটি।
গত ২৭ ডিসেম্বর প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে দল সাজানোর সুযোগ পায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। এর আগে সরাসরি চুক্তিতে ছয় দল দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের দলে ভেড়ায়। দল গঠন শেষে শক্তি ও অভিজ্ঞতার বিচারে অনেক এগিয়ে আছে মাহমুদউল্লাহর ঢাকা, মোস্তাফিজের কুমিল্লা এবং সাকিবের বরিশাল। তারুণ্যনির্ভর দল গড়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট। তারকা কিছুটা কম হলেও পিছিয়ে নেই মুশফিকের খুলনা। সবমিলিয়ে ছয় দলের লড়াইটা এবার কতটা রোমাঞ্চ ছড়ায় সেটাই দেখার।
বিপিএলে এবারের আসরে সেই অর্থে নেই ভালো কোনও বিদেশি খেলোয়াড়। কেননা ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) মাঠে গড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কারণেই ‘ভালো মানের’ বিদেশি ক্রিকেটাররা বিপিএলে আসেনি। তবে ফাফ ডু প্লেসি, ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, মঈন আলী, সুনীল নারিন ও ডোয়াইন ব্রাভোদের উচ্চমূল্যে নিয়ে চমক দেখিয়েছে বেশকিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি। এই ক’জন বিদেশি তারকা না থাকলে বিপিএল হয়তো একেবারেই জৌলুসহীন একটি টুর্নামেন্ট হয়ে যেতো! আরও একটি কারণে বিপিএল আকর্ষণহীন হয়ে গেছে। মাঠে গড়ানোর আগে আয়োজকরা সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন ডিআরএস প্রযুক্তি আনতে না পেরে। বর্তমান সময়ে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে ব্যবহার করা হয় ডিআরএস। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি নেই, তার ওপর দেশি আম্পায়ারদের খেলা পরিচালনা; মাঠের ক্রিকেট কতটা সাজানো-গোছানো ও পরিপাটি হয়— সেটাই দেখার।
এর বাইরে উইকেট নিয়ে আছে বিস্তর আলোচনা— ‘এবার কি স্পোর্টিং উইকেট বানাতে পারবেন কিউরেটররা’। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার ফুলঝুরি। কিন্তু বিপিএল মানেই যেন ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ। হোম অব ক্রিকেটের ধীরগতির, নিচু বাউন্সি ও নির্জীব মরা পিচ রানখরায় ভোগে বেশিরভাগ সময়। সিলেটে আগে ভালো উইকেট থাকলেও বর্তমান অবস্থাও মিরপুরের মতোই। সবমিলিয়ে কুড়ি ওভারের বিপিএল কী তার আকর্ষণ ধরে রাখতে পারবে? সাকিব-মুশফিকরা অবশ্য প্রত্যাশা করছেন স্পোর্টিং উইকেটেই হবে বিপিএল। এখন শুধু অপেক্ষা, আর কয়েক ঘণ্টা পরই বোঝা যাবে, ‘বিপিএল মানেই সার্কাস’ নাকি অন্য কিছু!