শ্রীলঙ্কা সরকারের সংকটকালে অর্থ ঋণ দিয়ে সহায়তা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির কারণে নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধের এক টাকাও পরিশোধ করতে পারেনি। উপরন্তু দেশটির সরকার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত তিন মাস সময় নিয়েছে। কিন্তু বাড়তি সময়েও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ দেশটির সরকার।
পরে সুদহার অপরিবর্তিত রেখে আরো তিন মাসের সুযোগ পায় শ্রীলঙ্কার সরকার। এই সময়েও কোনো অর্থ ফেরত দিতে পারেনি দেশটি। পরে সুদহারে নতুন শর্ত আরোপ করে ঋণ পরিশোধের সময় আরো এক বছর বৃদ্ধি করা হয়।
এদিকে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ঋণের কিস্তি শোধ না করে শ্রীলঙ্কার সরকার নতুন করে আরো ২৫ কোটি ডলার ধার চেয়েছে। সেটি আবার নতুন ঝুঁকি তৈরি করে কি না, তা নিয়ে সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক চূড়ান্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে গত বছরে ঋণসহায়তার জন্য বাংলাদেশের শরণাপন্ন হয়। দেশটি ডলারের সংকট মোকাবিলায় আমাদের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চায়। কিন্তু আমরা ২০ কোটি ডলার ধার দিয়ে বন্ধুপ্রতিম দেশটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, ‘কারেন্সি সোয়াপ’ ব্যবস্থায় ওই ঋণ পরিশোধের কথা ছিল তিন মাসের মধ্যে। লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে একই সুদের হারে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়। এ সময়েও কোনো অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় নতুন সুদহারের শর্তে ঋণ পরিশোধে আরো এক বছর সময় দেওয়া হয়। কিন্তু দেশটির অর্থনীতিতে ধস নেমে আসায় ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে নানা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ সামর্থ্য না থাকলে ঋণ আদায় হবে কোথা থেকে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। সব মিলে এ ঋণ আদায়ের বিষয়ে রীতিমতো বিপাকে রয়েছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ১৮ আগস্ট প্রথম কিস্তিতে শ্রীলঙ্কাকে ৫ কোটি ডলার দিয়েছে এবং ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় কিস্তিতে ঋণের বাকি অর্থ দিয়েছে। প্রথম শর্ত ছিল এই ঋণের পরিমাণ একবারে ২০ কোটি ডলারের বেশি হতে পারবে না। সে জন্য দেশটি ২৫ কোটি ডলার ঋণ চাইলেও ৫ কোটি ডলার দেওয়া হয়নি। এই সময় ডলারের সমপরিমাণ শ্রীলংকান রুপি জামানত হিসেবে জমা রাখে শ্রীলংকা।
প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার জন্য শ্রীলঙ্কাকে তিন মাস সময় দেওয়া হয় এবং এই সময় সুদের হার নির্ধারিত ছিল লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ। প্রথম তিন মাসে ঋণ শোধ করতে না পারলে শ্রীলঙ্কাকে আরও তিন মাস সময় দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বারের তিন মাসেও সুদের হার সমান থাকবে। তবে ছয় মাস পার হলে সুদের হার নির্ধারণ করা হয় লাইবরের সঙ্গে বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
লাইবর হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়ার জন্য প্রচলিত সুদের হার। বর্তমানে ৩ মাস মেয়াদি লাইবর হার হচ্ছে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ, আর ছয় মাস মেয়াদে লাইবর সুদহার হচ্ছে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ।
এদিকে চলমান আর্থিক সংকট মোকাবেলায় গত ৩০ মার্চ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের কাছে আগের শর্তেই আরও ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে শ্রীলংকার রাজাপক্ষে সরকার। তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে এই ঋণ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু শ্রীলঙ্কার তো অবস্থা এখন অনেক খারাপ। আমরা এমন জায়গায় তো টাকা দিতে পারি না। আমাদের টাকা ফিরে পেতে সমস্যা হতে পারে। বিপত্তি আর বাড়ানো উচিত হবে না।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com