ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে মার্চের শেষ দিক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত হিটস্ট্রোকে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় গেল পাঁচ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ প্রাণহানি। তীব্র গরমে দেশটির অন্য রাজ্যগুলো থেকেও মৃত্যুর খবর এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগেভাগেই তীব্র গ্রীষ্ম শুরু হওয়ায় এ হিটস্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে। দাবদাহে মানুষ হাঁসফাঁস করছেন। সূর্য থেকে তাপ যেন ঠিকরে পড়ছে। অস্থির ও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন মানুষ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের ১০০ কোটির বেশি লোক ভয়াবহ দাবদাহের ঝুঁকিতে রয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের খবর বলছে, ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল অঞ্চলজুড়ে কাঠফাটা গরমে কৃষকের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লোকজন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু অহরহ লোডশেডিং ঘটছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আলজাজিরা এমন খবর দিয়েছে। হিটস্ট্রোক শরীরকে নিস্তেজ করে দেয়। অতিরিক্ত তাপে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, কিডনিসহ মৌলিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়, ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, মাথা ঝিমঝিম করে। দেহকোষে তরল সরবরাহ কমে যায়, কোষগুলো প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
আগামী মাসের আগে ভারতে শীতল মৌসুমি বৃষ্টি আশা করা যাচ্ছে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির বিভিন্ন অংশে বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। গরমের সঙ্গে লোডশেডিং স্বাভাবিক জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। যেসব বাড়িতে এয়ার কন্ডিশন ব্যবস্থা আছে, আগামী কয়েকটি সপ্তাহ তাদের জন্যও স্বস্তিদায়ক হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রের গ্রামীণ অঞ্চলে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রদীপ আওতি এসব মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গম উৎপাদনকারী দেশ ভরত। কিন্তু চলতি বছরে দাবদাহের কারণে উৎপাদন কমে আসছে। গেল পাঁচ বছর ধরে কৃষকেরা আগের মতো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।
বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও কোম্পানিগুলোকে ব্যাপক কয়লা ঘাটতির মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও আমদানি বাড়াতে তাদের চাপ দিচ্ছে সরকার।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গেল ১০০ বছরে এটি ছিল ভারতের উষ্ণতম মার্চ। দেশজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছিল ৩৩ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে যা এক দশমিক ৮৬ ডিগ্রি বেশি।
গেল মাসে ভারতের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য উড়িষ্যা কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৫ এপ্রিল হিট স্ট্রোকে ৬৪ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও কয়েকশ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
রাজ্যটির উষ্ণতম জেলা সুবর্ণপুর। মঙ্গলবার সেখানে ৪৩ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহনা মাহাকুর বলেন, এখন প্রচণ্ড গরম। এয়ার কুলার, ফ্যান—কিছুই কাজে আসছে না।
সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, অগ্নিনির্বাপণ কর্মী, বিদ্যুৎ প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তাসহ অন্যদের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দেয় দাবদাহ। যেসব অঞ্চলে এয়ারকন্ডিশনিং বেহাল, সেখানকার লোকজনকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
রাজস্থানে জিরা ও গম চাষ করেন ৪৮ বছর বয়সী স্বধর্ম বোস। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থা ভালো না।
জলবায়ু বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে। যা আরও স্থায়ী ও বিপজ্জনক রূপে মানুষকে আক্রান্ত করবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দাবদাহকে আরও বিরূপ পরিস্থিতিতে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক দশক আগেও তাপমাত্রার যে ভিত্তিরেখা ছিল, তা আরও বেশি বেড়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার কর্মকর্তা ক্লেয়ারে নুলিস বলেন, আমাদের পরিবর্তিত জলবায়ুর একটি বড় নির্দেশক হলো চরম দাবদাহ। তবে ভারত কিংবা পাকিস্তানের বর্তমান তাপমাত্রা আবহাওয়া রেকর্ড নতুন স্তরে নিয়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।