ইরানের রাজধানী তেহরানে গতকাল সিরিয়া শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিরিয়া সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের উদ্যোগে যে 'আস্তানা শান্তি প্রক্রিয়া' শুরু হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে মঙ্গলবারের বৈঠক ছিল তার সপ্তম শীর্ষ সম্মেলন। সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী পক্ষসহ এই তিন দেশের প্রতিনিধিদের ধারাবাহিক অন্তত ১৮টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের শীর্ষ নেতারা ছয়বার বৈঠকে বসেছেন। সিরিয়ায় উত্তেজনা কমিয়ে আনা, সিরিয়ার শরণার্থীদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া প্রভৃতি ছিল তাদের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু। এ ছাড়া, আগে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় যেসব বৈঠক হয়েছে তাতে সিরিয়ায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও কথাবার্তা হয়েছে।
এবার তেহরানে সপ্তম শীর্ষ বৈঠক এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন কিছুদিন আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নতুন করে সামরিক হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন যা কিনা ইরান ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। ইরান এরদোগানের ওই হামলার হুমকির বিরুদ্ধে পাল্টা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল এতে করে আঞ্চলিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পাবে। তেহরানে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে দেয়া সাক্ষাতে গতকাল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, 'সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালালে সিরিয়া ও তুরস্ক উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সমগ্র অঞ্চলের ওপর'। এতে করে সমস্যা সমাধানের জন্য সিরিয়ার সরকার যে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হবে বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা উল্লেখ করেন।
যাইহোক, ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও এর প্রতি সম্মান দেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিবৃতিতে সিরিয়ার শরণার্থী প্রত্যাবর্তন, সন্ত্রাসবাদ দমন, বেআইনি স্বায়ত্বশাসনের দাবি মেনে না নেয়া এবং সিরিয়ার সম্পদ লুট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষার করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে যদিও সিরিয়া সংকট নিয়ে কথা হয়েছে কিন্তু রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টদের তেহরান সফরের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব কেবল সিরিয়া ইস্যুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কারণ এতে করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরও অনেকটা চাপা পড়ে গেছে। ইরান এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে তারা এ অঞ্চলের দেশগুলোর ভৌগোলিক অবস্থানের পরিবর্তনের বিরোধী। বিশেষ করে আর্মেনিয়ার সাথে ইরানের সীমানার বিষয়ে তেহরানের অবস্থানের কথা তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে ইরানের সাথে এই সীমানা বিচ্ছিন্ন করার কথা কেউ কল্পনাও না করে।
যাইহোক, এবারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠককে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
সুত্রঃপার্সটুডে
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com