আজ শুভ মহালয়া। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।
আশ্বিনের ‘শারদ প্রাতে’ আলোকবেণু বাজতে আর কয়েকদিন অপেক্ষা।
চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষ শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়।
কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।
তাই এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনী।
আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিক্ষণকেই বলা হয় মহালয়া। ‘মহ’ শব্দটির দুটি অর্থ আছে ।
‘মহ’ বলতে বোঝায় পূজা, আবার ‘মহ’ বলতে বোঝায় উৎসব। মহালয় হচ্ছে পূজা বা উৎসবের আলয় বা আশ্রয়। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিক্ষণকেই বলা হয় মহালয়া। ‘মহ’ শব্দটির দুটি অর্থ আছে। অন্যদিকে ‘মহালয়’ বলতে, ‘পিতৃলোককে’ বোঝায় যেখানে বিদেহী পিতৃলোক অবস্থান করছেন। তা যদি হয়, তাহলে পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই মহালয়া। কিন্তু তাহলে শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ হলো কেন? পিতৃপক্ষের অবসানে, অন্ধকার অমাবস্যার সীমানা ডিঙিয়ে আমরা যখন আলোকময় দেবীপক্ষের আগমন প্রত্যক্ষ করি, তখনই সেই মহালগ্নটি আমাদের জীবনে ‘মহালয়ার’ বার্তা বহন করে আনে। এ ক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই হচ্ছে সেই মহান আশ্রয় বা আরাধনার ক্ষেত্র এবং তাঁর এ উত্তরণের লগ্নটির নামই মহালয়া। এদিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদান হয়।
পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়। এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গা পূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
মহালয়া আসা থেকেই ধুম শুরু হয় দূর্গা উৎসবের। পুরাণ মতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গা পূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। চারিদিকে পুরদস্তুর শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি ও উদযাপন।
আগামী পহেলা অক্টোবর (১৪’আশ্বিন) থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি শুনা যাবে। দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হবে। ভোর ৬টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি। দেশের অন্যান্য মন্দিরেও এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। দেবী দুর্গার আগমনী উপলক্ষে দিনটি উদ্যাপন করতে ভোর সাড়ে পাঁচটায় বনানী মাঠে দেবীবরণের আয়োজন করেছে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করবেন পান্না লাল দত্ত।
গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, "গত বছরের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা ৫০টি বেশি। সব মণ্ডপেই নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। গত বছরের সহিংসতার কথা মাথায় রেখে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক বেশি সক্রিয়। তার পরও আমরা মনে করি, ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে সুরক্ষা দেওয়া খুব কঠিন। তাই আমরা প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি, যারা রাতেও মণ্ডপ পাহারা দেবে।"
এছাড়াও বিজয়া দশমী পড়েছে ০৫ অক্টোবর (১৮’ আশ্বিন) বুধবার । এই বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়েই শেষ হবে দূর্গা উৎসব।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com