আবারো মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরের দিকে স্টেনগানের ছোড়া গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। এ সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আবছার রেডিও তেহরানকে বলেন, শনিবার দুপুরে দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের লেমুছড়ি এলাকায় গোলা এসে পড়ার সংবাদ প্রথমে তাকে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ সময় নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড লেমুছড়ি বাহিরমাঠ এলাকায় একটি গুলি এসে পড়ে। এ তথ্য জেনে তিনি নিজে সীমান্তবর্তী এলাকায় গিয়ে আরো বিস্তারিত খোঁজখবর নেন।
তিনি বলেন, সেখানে গোলাগুলির কারণে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোছড়ি ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। আবার অনেককে নিরাপদ এলাকায় সরিয়েও নেয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে এমন গোলাগুলির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মিয়ানমার সরকার কূটকৌশলের অংশ হিসেবে বারবার উসকানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শফিউল্লাহ রেডিও তেহরানকে বলেন, মিয়ানমার কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমার বাইরে গিয়ে বারবার বাংলাদেশকে উসকানি দিচ্ছে। তারা চাচ্ছে কোন একটি অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে। কিন্তু বাংলাদেশ অত্যন্ত নমনীয় আচরণ করায় বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার কোন ত্রুটি আছে তা ভাববার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী ও সীমান্ত রক্ষীবাহিনী যথেষ্ট তৎপর ও প্রস্তুত বলে মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক। তবে সীমান্ত এলাকার বাহিনী সদস্যদের মানসিক মনোবল চাঙা রাখতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের করণীয় চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শফিউল্লাহ।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক হাফিজুর রহমান কার্জন রেডিও তেহরানকে বলেন, মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে বারবার করে গোলা ছোড়ার ঘটনায় বাংলাদেশের নমনীয় আচরণকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। কারণ বাংলাদেশ মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এবার এই ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান না করে মিয়ানমার সরকার বারবার উসকানি দিলে বাংলাদেশ সরকারকেও সামরিক জবাব দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সেনাবাহিনী প্রধানদের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক কার্জন বলেন, সামরিক জোটের সাথে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশকে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। মিয়ানমারের অযাচিত আচরণের কৌশলগত জবাব দিতে সামরিক বিশেষজ্ঞদের প্রতিও অনুরোধ জানান এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
তবে সবশেষ গোলা এসে পড়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন তথ্য উপাত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ কিংবা প্রচার করা হয়নি।
সূত্রঃ পার্সটুডে
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com