শেষ পর্যন্ত নক আউটের আগেই কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো জার্মানিকে। কোস্টারিকাকে হারিয়েও বিশ্ব কাপের নকআউটে যেতে পারল না চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। আজ আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ই-গ্রুপের শেষ ম্যাচে কেই হাভার্টজের জোড়া গোলে কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে পরাজিত করেছে চার বারের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু একই সময় অনুষ্ঠিত গ্রুপের আরেক ম্যাচে জাপান ২-১ গোলে স্পেনকে হারিয়ে আরেকটি আপসেটের জন্ম দিলে জয় নিয়েও শেষ ষোলতে খেলা থেকে বঞ্চিত হয় জার্মানি। ওই জয়ের ফলে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ই’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এশিয়ার পাওয়ার হাউজ জাপান। আর ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানারআপ হিসেবে নকআইট পর্বে যায় স্পেন।
ম্যাচে হাভার্টজের জোড়া গোল ছাড়াও জার্মানির হয়ে অপর গোল দুটি করেছেন সার্জি গ্যানাব্রি ও নিকলাস ফুয়েলক্রুগ। কোস্টারিকার হয়ে গোল করেছেন ইয়েলিস্টিন টাজেডা। এ ছাড়া অপর গোলটি এসেছে জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারের পা থেকে। তিন নারী রেফারি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ম্যাচটিকে পৌছে দিয়েছে নতুন এক ইতিহাসে।
গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে হেরে যাবার পর দ্বিতীয় ম্যাচে স্পেনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে কোন রকমে টিকে ছিল জার্মানি। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে স্পেনের কাছে সাত গোলে বিধ্বস্ত হবার পর দ্বিতীয় ম্যাচে জাপানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টে ফিরে আসে কোস্টারিকা।
কোস্টা রিকার বিপক্ষে ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে প্রথম আক্রমনটি রচনা করে জার্মানরা। জামাল মুসিয়ালার আকষ্মিক বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন কোস্টারিকার গোল রক্ষক কেইলর নাভাস। ৬ষ্ঠ মিনিটে সার্জি গ্যানাব্রি অসাধারণ একটি অ্যাঙ্গেল থেকে শট নিলেও অফসাইডের ঝান্ডা উচিয়ে ধরেন কর্তব্যরত লাইন্সম্যান।
মুহূর্মুহু আক্রমন চালাতে থাকা জার্মানি হয়ে থমাস মুলার ১০ম মিনিটে গোলের দারুন একটি সুযোগ পান । বক্সের ভেতর থেকে তার নেয়া হেডের বলটি সাইডবারকে পাশ কাটিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটেই গোল খরা কাটায় জার্মানি। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে কোস্টা রিকার সীমানায় ঢুকে পড়া ডেভিড রমের ক্রসের বল কোস্টা রিকার পোস্টের সামনে থেকে লাফিয়ে উঠে প্লেসিং হেডে জালে জড়িয়ে দেন সার্জি গ্যানাব্রি (১-০)।
১৬ মিনিটে ব্যাবধান দ্বিগুন করার দারুন একটি সুযোগ হারায় জার্মানি। কর্নার থেকে উড়ে আসা ক্রসের বল লাফিয়ে উঠে হেডের চেস্টা করেছিলেন লিঁও গোরেতকা । যদিও ওই সময় তার আশেপাশে কেউ ছিলনা। কিন্তু টাইমিংয়ের কারণে বলের সঙ্গে যুতসই ভাবে মাথার সংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হন তিনি। বলটি সরাসরি আশ্রয় নেয় গোলরক্ষখ নাভাসের হাতে।
এরপর কিছুক্ষণ পর ২২ মিনিটে সানের ক্রসের বল নিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন বায়ার্ন মিউনিখ সতীর্থ গ্যানাব্রি। ৩৩ মিনিটে জসুয়া কিমিচের দুর্বল শটের বল গ্রিবে পুরে নেন নাভাস। ৩৮ মিনিটে জামাল মুসিয়ালার শট পোস্টের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়।
৪৪ মিনিটে গোল পরিশোধের সেরা সুযোগ হাতছাড়া করে কোস্টা রিকা। এই সময় রক্ষন থেকে উড়ে আসা বল একেবারেই ফাকায় পেয়ে যান কেইশার ফুলার। ডি বক্সে তিনি যখন বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন তখন তার সামনে শুধু জার্মানের গোল রক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার ছাড়া আর কেই ছিলেন না। কিন্তু বলটি তিনি গোল রক্ষকের দিকেই মেরে দেন। বলটি ক্রস বারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন নয়্যার। ফলে প্রথমার্ধে সমতায় ফেরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় কোস্টা রিকা। আর পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় দলটি।
বিরতি থেকে এসে সমতায় ফিরে কোস্টা রিকা। ৫৮ মিনিটে সেলসো ইয়োহান ভেনেগাসে ক্রসের বল প্রথম দফায় হেড দেন সেলসো বোরগেস, কিন্তু বলটি ফিরিয়ে দেন জার্মান গোল রক্ষক নয়্যার। ফিরতি বলটি শটের সাহায্যে ফের জালে জড়িয়ে দেন ইয়েলিস্টিন টাজেডা (১-১)।
এরপ ৬৯ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে জোয়েল ক্যাম্পবেল এর ক্রসের বলে কেন্ডাল ওয়াস্টনের হেড গোলরক্ষক নয়্যারের পায়ে লেগে জালে জড়ালে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় কোস্টা রিকা।
৭৩ মিনিটে নিকলাস ফুয়েলক্রুগ এর পাস থেকে বল নিয়ে বেশ ঠান্ডা মাতায় কোস্টা রিকার জালে জড়িয়ে জার্মানিকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন ফরোয়ার্ড কেই হাভার্টজ (২-২)।
৮৫ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে গ্যানাব্রি’র ক্রস থেকে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এগিয়ে আসা হাভার্টজ বাঁ পায়ের টোকায় বল জালে জড়ালে ফের ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। ৮৯ মিনিটে লেরয় সানের পাস থেকে নিকলাস ফুয়েলক্রুগ গোল করলে ৪-২ গোলের বড় জয় নিশ্চিত হয় জার্মানির। তবে এই ফলাফল কাজে আসেনি কোন দলের। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হলো দুই দলকেই। ১৯৯০ আসরে শেষ ১৬ পর্বে অংশ নিয়েছিল কোস্টারিকা।