বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমরা ব্যবসায়ীদের চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমানোর অনুরোধ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আশাকরি রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমবে।
রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৬ষ্ঠ সভা’ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করে দেখেছি চিনির দাম সাড়ে চার টাকার মতো কমানো যায়। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি পাঁচ টাকা কমানোর। তারা আমাদের সঙ্গে এগ্রি করেছে। যে শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে, সেই সুবিধার পণ্য এখনো বাজারে আসেনি, আরও কয়েকদিন লাগবে। তারা কিছুদিন সময় চেয়েছেন। আশাকরি রোজার প্রথম সপ্তাহেই নতুন দামটা চলে আসবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা নিজে থেকে একটা কথা বলেছেন মিলগেটে যে দামে তারা দেয় তার থেকে ৫-৬ টাকা প্রফিট করে দোকানে বিক্রি করে। সেটা চলবেই। তবে তারা নিজ উদ্যোগে ঢাকার পাশাপাশি প্রধান শহরে মিলগেটের প্রাইসে ট্রাক সেল (বিক্রি) করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চিনি যথেষ্ট পরিমাণে আছে, মানুষের মনে ভয় লেগে আছে চিনি নেই। চিনি কিন্তু পাইপলাইনেও প্রচুর আছে। ফলে চিনি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা পাঁচ টাকা কম রেটে মিলগেট থেকে দেশের সবস্থানে চিনি পৌঁছে দেবে। ব্যবসায়ীদের অবস্থান পজিটিভ আছে। আমরা তাদের বলেছি, আগামীকাল থেকে মনিটরিং করতে শুরু করবো। নতুন ট্যারিফে পণ্য ছাড় করতে শুরু করেছেন কি না। যদি না করে তাহলে আমরা বলবো তিন দিনের মধ্যে করতে হবে। সেটা তাদের অনুসরণ করতে হবে।
এ সময় টিপু মুনশি বলেন, একটা টেন্ডেন্সি আমরা লক্ষ্য করি রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহ থেকে সব মাল ঘরে ঢুকিয়ে ফেলি। তাহলে সাপ্লাই চেন কোথা থেকে আসবে। সাপ্লাইয়ের তো একটা সিস্টেম আছে।
তিনি বলেন, রমজান একেবারে কাছাকাছি এসে গেছে। পণ্য যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তাদের যাতে কষ্ট কম হয়, এ বিষয়ে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। এ নিয়ে গত ১৫-২০ দিন ধরে কথা বলছি।
‘আমরা জাতির সামনে একটি কথা বলতে চাই, রমজান সামনে রেখে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের কাছে যে চিনি-তেল আছে, তাতে বর্তমানে বাজারে যে দাম চলছে বা যেটা ঠিক করে দেয়া আছে, তার চেয়ে বাড়ার কোনো কারণ নেই’ বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যা খরচ, তার চেয়েও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তবে কয়েকটি বছর পরে রমজান উন্মুক্তভাবে হচ্ছে, এবার ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। যে কারণে দাম একটু বাড়তে পারে, সমস্যা হওয়ার কথা না।
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ যথেষ্ট পরিমাণ আছে। ভারত থেকে আমদানিও স্লো (ধীরগতি) করে দিয়েছি। যাতে করে আমাদের কৃষকরা (দাম) পায়। ভোক্তারাও যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে। তবে আমরা নিবিড়ভাবে বাজার মূল্যায়ন করবো। যদি দেখি দাম বাড়া শুরু করেছে, তাহলে আমদানিতে যে বিধিনিষেধ করে দেয়া আছে, সেটা উঠিয়ে দেবো। কোনো অবস্থাতেই সমস্যা হওয়ার কথা না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই রমজানে শাকসবজির গাড়িতে যাতে চাঁদাবাজি না হয়, তা শক্তভাবে মনিটর করতে বলা হয়েছে। সচিবকে বলেছি, ডিসি পর্যায়ে সরাসরি বলে দিতে মহাসড়কগুলো দিয়ে খাদ্যসামগ্রী, শাকসবজি নিয়ে আসা যায়। এসব ট্রাক যাতে কোথাও না থামায়। কোনো অবস্থায় চাঁদাবাজি করতে দেওয়া যাবে না। তাদের চলাচল মসৃণ করে দিতে হবে। সবগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মুরগির দাম নিয়ে কাজী ফার্মের একজন পরিচালক ভোক্তা অধিকারের কাছে সম্প্রতি বলেছেন, মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ টাকা আর পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ১৯০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত। এই যে মূল্যের ব্যবধান সে বিষয়ে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মুরগির দামের বিষয়ে কেউ একজন এসে বলে গেছে সেটা তার বক্তব্য। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারাই বিবেচনা করে মূল্য ঠিক করে দেবে। তারা যদি ঠিক করে দেন মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ বা ১৪০ টাকা এবং এটার প্রকৃত মূল্য হচ্ছে ১৭০ টাকা, এটা যদি তারা ঠিক করে দেন তাহলে আমাদের ভোক্ত অধিকার সে মূল্যেই তাদের ধরবে। আমরা এ বিষয়টি ঠিক করতে পারবো। যেহেতু আমাদের কোনো ধারণা নেই এই বিষয়ে। এ জন্য তারাই মূল্য ঠিক করে দেবে।
তিনি বলেন, যখন মার্জিন বেশি হয় তখন সবাই এ বিষয়ে কথা বলে। অথচ যখন আমরা কম দামে বিক্রি করি লোকসান দেই সেটা কেউ বলে না। এখানে মার্জিন বেশি হলে কমানোর দায় আমাদের আর যখন লোকসান যাচ্ছে তখনও কিন্তু আমাদের সবাইকে দেখতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, আমাদের দেশের বাজারে কমানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে এটা সত্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের তেলের দাম কমলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে। যদি এমনটা হতো তেলের দাম কমেছে ডলারের দাম আগের অবস্থা রয়েছে তাহলে তেলের দাম কমানো যেতো। তারপরও প্রতিনিয়ত আমরা দেখছি।
টিপু মুনশি বরেন, রমজান মাস সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের বলেছি আমরা আবার রমজানের পর আপনাদের নিয়ে বসবো। এ সময়টায় আর কোনো অবস্থাতেই পণ্যের দাম বাড়াবেন না। এ বিষয়টি ব্যবসায়ীরা সম্মত হয়েছে।
তেল-চিনির কী পরিমাণ মজুত আছে এবং চাহিদা কত? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে, আমাদের যা প্রয়োজন তার মিনিমাম দেড়গুণ তাদের কাছে মজুত রয়েছে। তাদের হাতে আছে ও পাইপলাইনে আছে। ফলে কোনোভাবেই সমস্যা হবে না। তেল এবং চিনি এই দুইটাই তাদের কাছে যথেষ্ট আছে। ছোলা যে দামে আনা হচ্ছে তার থেকে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।