আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অস্থির অবস্থায় বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজার। নিয়ন্ত্রণের নানা চেষ্টার ব্যর্থতার পরে বাণিজ্যমন্ত্রীর হুমকি ব্যবসায়ীদের প্রতি। আসন্ন রমজানে অতিরিক্ত লাভ না করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, কোনোভাবেই অতিরিক্ত দাম নেয়া যাবে না। সংযমী হতে হবে ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি, ক্রেতাদেরও প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। যার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘নিরাপদ জ্বালানি, ভোক্তাবান্ধব পৃথিবী'। কিন্তু কতখানি ভোক্তাবান্ধব বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বাজার ব্যবস্থাপনা, সেই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে ভোক্তাদের মাঝে। বাজারে গিয়ে নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে ক্ষুদ্ধ তারা।
সাধারণ মুদিদোকান থেকে শুরু করে বড় সুপারশপ, রাস্তার পাশের খাবারের দোকান কিংবা নামিদামি রেস্তোরাঁ—সবখানেই এখন অনিয়ম। এর বাইরে নয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সেবাদানকারী কর্তৃপক্ষও। বাজারজুড়ে যেন ভোক্তাদের জন্য প্রতারণার ফাঁদ। যেখানেই অভিযান চালানো হয়, মেলে অনিয়ম-প্রতারণার প্রমাণ। খোদ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে এমন তথ্য।
২০০৯ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ৬২ হাজার ৯টি অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। তাতে এক লাখ ৪৬ হাজার ৬৬০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম পেয়েছে সংস্থাটি। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানে ভোক্তারা প্রতারিত হয়ে আসছিলেন।
ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে অভিযোগ জমা পড়েছিল ২৫ হাজার ৩৪৬টি। এর আগের অর্থবছরে জমা হয়েছিল ১৪ হাজার ৯১০টি অভিযোগ। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংখ্যাটি ছিল ৬ হাজার ১৪০। অর্থাৎ ছয় বছরে সেবা বা পণ্য কিনে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিকার চাওয়া বেড়েছে চার গুণের বেশি।
বাজার অব্যবস্থাপনা রোধের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হলেও এই প্রতিষ্ঠানের কাজে সুফল থেকে এখনো বঞ্চিত দেশের বেশির ভাগ মানুষ। কারণ নানা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যার মধ্যে জনবল সংকট সবচেয়ে তীব্র। ভোক্তা অধিদপ্তরের ২৪০ জন জনবলের মধ্যে দেশের ১৭ কোটি ভোক্তার অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করছেন মাত্র ১০৮ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে রাজধানীতে প্রায় আড়াই কোটি মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা। ফলে তাদের দিয়ে ভোক্তার কী উপকার হচ্ছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই জনবল কাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি আইনের আধুনিকায়নের দাবি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
এছাড়া রয়েছে প্রভাবশালীদের চাপ। ফলে সংস্থাটি ভোক্তার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে পারছে না। তারা শক্ত অবস্থানে গেলে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট ডেকে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। তখন ভোক্তার ভোগান্তি আরও বাড়ে। এছাড়া পুরনো আইনের বাইরে থেকে যাচ্ছে ই-কমার্সের প্রতারণা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোক্তার অধিকার দেখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর করা হলেও আইনে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করলে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই আইন সংস্কারের তাগিদ এই ক্যাব নেতার।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে ভোক্তা আইন হওয়ার পর ২০০৯-২০১০ অর্থবছর এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬২ হাজার ৯টি অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। এতে এক লাখ ৪৬ হাজার ৬৬০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে ১০২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৪২ টাকা।
পাশাপাশি প্রতারিত ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ হাজার ৩০২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৮০৮ টাকা জরিমানা করা হয়। এই দুই খাতে মোট ১০৮ কোটি ৮০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু আইনে জরিমানার সঙ্গে জেলে পাঠানোর কথা থাকলেও নজির নেই।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com