ভারতের গুজরাতের গভীর অরণ্যে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। দেবগড় বরিয়ার বনাঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বরাবরই ছিল। অতীতেও মধ্যপ্রস্তর যুগের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ এখানে পাওয়া গিয়েছে। সেই দেবগড় বরিয়াতেই নতুন করে খোঁজ মিলল পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার। দেবগড় বরিয়ার এই জঙ্গল স্লথ বিয়ারের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এই জঙ্গল এবং আশপাশের এলাকা ঐতিহাসিক সংস্কৃতি এবং সভ্যতারও এক ভাণ্ডার।
সম্প্রতি গুজরাত বন বিভাগের একটি দল দেবগড় বরিয়ার জঙ্গলে ট্রেকিং করতে গিয়েছিল। সেই দলেরই একজন পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। মাটি থেকে উঠে পাথরটিকে ভাল করে দেখতেই তাতে কিছু আঁকিবুঁকি দেখতে পান। আরও ভাল করে দেখতেই লহমায় খুলে গেল পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার গুহাচিত্র আবিষ্কারের দরজা!
ভালো করে দেখেই গুহায় প্রবেশ করলেন বনকর্মীরা। গুহার মেঝেতেও তারা ওই ধরনের বেশ কয়েকটি ছবি দেখেন। গুহা থেকে ফিরে আসার সময়ে বেশ কয়েকটি পাথর তারা তুলে নেন, যেখানে কিছু ছবি আঁকা ছিল। পরে সেই পাথরের টুকরো পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই অঞ্চলে মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষের বসবাস ছিল। গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা। সেই সভ্যতার মানুষজনই এই সব গুহাচিত্র এঁকেছিল।
প্রাচীনকালের সেই সব মানুষজন গুহার দেওয়ালে এবং পাথরে যেসব ছবি এঁকেছিলেন, তার বেশ কয়েকটি এখনও অক্ষত রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, গুহায় গ্রানাইট পাথরের উপর ছবিগুলি এমন ভাবে আঁকা হয়েছিল, যাতে সেগুলি বৃষ্টি, বাতাস এবং প্রখর রোদেও নষ্ট না হয়।
এই নিদর্শনগুলি মূলত দেবগড় বারিয়া ও সাগতলার মাঝখানের ভ্যাভরিয়া ডুঙ্গার পাহাড়ে রয়েছে। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, জঙ্গলের আরও কিছু পাহাড়ের গায়ে এই ধরনের ছবি রয়েছে, যেগুলি আংশিক ভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং গুহাচিত্র বিশেষজ্ঞ, ভিএইচ সোনাওয়ানে বলেন, পাহাড়ের পাথরে আঁকা চিত্রগুলি আলাদা আলাদা সময়ের। একটি ষাঁড় এবং কয়েকটি মানবচিত্র সম্ভবত মধ্যপ্রস্তর যুগের।
তার মতে, দেবগড় বরিয়ায় খুঁজে পাওয়া গুহাচিত্রগুলি গ্রানাইট পাথরের উপর লাল হেমাটাইট শিলা দিয়ে আঁকা। এই ধরনের শিলা পাথুরে মাটিতে পাওয়া যায়। সোনাওয়ানে বলেন, এই সব গুহাচিত্র বড় আবিষ্কার। এই ছবি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ এখানে বসবাস করত!