রুদনেভো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শনের সময় পুতিন ঘোষনা করেছে রাশিয়া ১ ট্রিলিয়ন রুবল বা $১২ বিলিয়ন ডলার ড্রোন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করবে ৷ এটা খুব স্মার্ট একটা মুভ।
পুরাতন ডিফেন্স রিলেটেড স্ট্রাটেজিক পরিবর্তন নিয়ে লেখায় বলা হয়েছিলো আধুনিক সমরাস্ত্রের দাম ও অনেক। দুর্বল দেশগুলির জন্য বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও সীমিত সম্পদের দেশগুলির জন্য ফ্যান্সি সামরিক এসেটের পেছনে ব্যয় না করে কস্ট ইফেক্টিভ ও কার্যকরী সমাধানের পেছনে ছূটা উচিত।
উদাহরণ হিসাবে ইরানের কথা ধরা যায়। নিষেধাজ্ঞায় দেশটির বিমানবাহিনী কার্যত অকেজো। তাদের বহরে মার্কিন টমক্যাট এখনো কোনরকম সার্ভিস দিচ্ছে। খুব দামি যুদ্ধবিমান কেনা ও বহর বৃদ্ধি করা তাদের জন্য বিলাসিতা। কিন্তু ইরানের আকাশ মোটেও অরক্ষিত নয়। অফেন্সিভ ও সার্ভেলেন্সে তারা মোটেও পিছিয়ে নেই। এর কারন হল, তারা ফ্যান্সি যুদ্ধবিমান তৈরির থেকেও বেশি প্রাধান্য দিয়েছে কম খরুচে প্রযুক্তিতে। হাজার ডলারের রকেট, কামিকাজি ড্রোনের মাধ্যমে তারা ডিটারেন্স সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ট্যাংকের উদ্ভব হলেও এর কার্যকরী প্রয়োগ দেখা গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। তখনকার বুলেটে কাছে ট্যাংক ছিল দানব এক দেয়াল যেটা পদাতিক সৈন্যদের এসকোর্ট করে এগিয়ে নেয়ার জন্য সফল ছিল।
এর ভেতর প্রায় শতাব্দি পেরিয়েছে। প্রযুক্তি ও যুদ্ধের ধরন বদলেছে। বর্তমানে একটার ট্যাংকের দামে যে পরিমান আধুনিক এন্টি ট্যাংক মিসাইল সিস্টেম পাওয়া যায় সেটার ব্যাবহার আরো বেশি ইফেক্টিভ। আফগান যুদ্ধ বা ইরাক যুদ্ধেও এটাক হেলিকপ্টার কার্যকরভাবে ব্যাবহার হয়েছে। কিন্তু পরাশক্তিগুলি হেরিকপ্টারগুলি ধ্বংস করতে আরো কম খরচে কার্যকরী ডিফেন্স সিস্টেম সার্ভিসে এনেছে। রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল মোটামুটি সামরিক এসেটের দিক থেকে একি ধরনের সমরাস্ত্র ও শক্তির যুদ্ধ। এখানে যেভাবে ট্যাংক ও হেলিকপ্টারগুলির কবর রচনা হয়েছে মিসাইল সিস্টেমের কাছে তাতে এটা উপলব্ধি করা ভুল হবেনা যে যাদের সম্পদ সীমিত তাদের জন্য এসব এসেটে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আদতে বিলাসিতা। এগুলার ইফেক্টিভনেস বেশ কমেছে।
এমনকি যুদ্ধবিমান গুলির ক্ষেত্রেও এর দাম, রক্ষনাবেক্ষন খরচ ও পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর জন্য উপযোগী রানওয়ে লাগে। প্রতিঘন্টা উড্ডয়ন খরচ অনেক বেশি। পরিচালনার জন্য হিউম্যান এসেট ডেভেলপ করা সময় সাপেক্ষ ও খরুচে। এর বিনিময়ে যুদ্ধে এর কার্যকরীতা সীমিত হয়ে যায় যখন প্রতিপক্ষের কাছে ভাল আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেম থাকে। এছাড়া মৃত্যু ঝুকিতো আছেই।
এসব বিবেচনায় ড্রোন দারুন সমাধান এনেছে। আফগান যুদ্ধে মার্কিন রিপার গুলি যখন একের পর এক টার্গেটে নির্ভুল আঘার হানতে থাকল তখন সারাবিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছিল মানবশূন্য যানের কার্যকরীতা। তখনো ড্রোন প্রযুক্তি ছিল দুর্লভ।
বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষে ড্রোন প্রযুক্তি সহজলভ্য হবার কারনে কমার্সিয়াল বা ব্যাক্তিগত ব্যবহার ও সাধারন বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ডিফেন্সে এর সফলতা ঈর্ষনীয়। সল্প খরুচে ড্রোনে যেমন সার্ভেইলেন্স পারপাজ সার্ভ হয় সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ধ্বংসেও সফল। অপারেট করতে লাগেনা বিশাল রানওয়ে। মেইন্টিনেন্স খরচ কম। আবার ড্রোন ধ্বংস করতে ব্যাবহার করা মিসাইলের খরচ সাধারনত দেখা যায় ড্রোনের থেকেও বেশি। যদিও এটা ড্রোন ও মিসাইলের টাইপের উপর নির্ভর করে। তবে মোটাদাগে ব্যাপারটা এমন।
বর্তমানে বিলিয়ন ডলারের MRCA যতটা ডিটারেন্স দিতে পারে ড্রোন, বা সল্প খরুচে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা তার থেকে কম দেয় না।
এমনকি নেভিতেও সামনের দিনগুলিতে দানবাকার নিউক্লিয়ার সাবমেরিনগুলি মশার মত ড্রোনের কাছে পরাস্ত হতে পারে। শিপের ক্ষেত্রেও এরকমটা প্রযোয্য। যাদের সম্পদ সীমিত। বিশাল খরচের বড় বহর মেইনটেইন করা কঠিন সেসব দেশের জন্য এরকম স্মার্ট ও ইফেক্টিভ সামরিক এসেট গেম চেঞ্জার হয়ে দাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও উচিত হবে আমাদের সামরিক সক্ষমতায় আমাদের উপযোগী এমন সব সামরিক এসেটে বিনিয়োগ করা যেটা কম খরচে সর্বোচ্চ ডিটারেন্স দিতে সক্ষম।
আগামীর বিশ্বে হয়ত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এই সভ্যতায় প্রযুক্তিই সব।