রাজধানীর গুলশান শপিং সেন্টারটি ভেঙে ফেলার আগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছ থেকে আরও অন্তত দুই বছর চান ব্যবসায়ীরা। এদিকে ব্যবসায়ীদের সড়ক থেকে সরে দাড়াতে পুলিশ বারবার অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধের পর পুলিশ ব্যবসায়ীদের সরাতে গেলে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের।
বিকেল পৌনে ৪টা থেকে পুলিশ ব্যবসায়ীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা চালায়। এরপর ব্যবসায়ীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় কয়েকটি প্রাইভেটকার ও বাস ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গুলশান-১ নম্বর চত্বরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে সড়ক অবরোধ করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মার্কেটটি থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে তাদের ১-২ বছর সময় দেয়া হলে রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াবেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা ডিএনসিসির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নই। তারা বলেছে মার্কেট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। তবে এজন্য আমাদের ১-২ বছর সময় দিতে হবে। সময় পেলে আমরা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুটিয়ে ফেলতে পারব। তখন মার্কেট ভাঙলে আমাদের সমস্যা হবে না। বৃহস্পতিবার গুলশান-১ নম্বর চত্বরে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা এ কথা বলেন।
রাস্তায় আন্দোলনরত ব্যবসায়ী ওসাসির আলম বলেন, আমার দোকানে লাখ লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। আমি মালিকের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নেয়ার সময় অনেক টাকা সিকিউরিটি দিয়েছি। এছাড়া ব্যবসার ওপরে ব্যাংক থেকে অনেক টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন হঠাৎ করে মার্কেট বন্ধ করে দিলে কীভাবে কী হবে। আমরা মার্কেট ভাঙার বিপক্ষে নই। তবে আমাদের অন্তত দুই বছর সময় দিতে হবে। সময় পেলে আমরা মার্কেট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সিকিউরিটির অর্থসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা একটা সেটেলমেন্টে আসতে পারব। এছাড়া ব্যাংক ঋণ ও দোকানে থাকা মালামালের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারব। তা না হলে তো আমরা শেষ হয়ে যাব। মেয়র যদি সময় বাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে মার্কেট খুলে দেন তাহলে আমরা এখনই রাস্তা ছেড়ে দেব।
আরেক ব্যবসায়ী মো.শহীদ উল্লাহ বলেন, এভাবে মার্কেট বন্ধ করে দিলে তো আমরা লাখ লাখ টাকার লোকসানে পড়ে যাব। এই লোকসান কাটিয়ে আমরা কোনোদিন দাঁড়াতে পারব না। আমাদের ব্যাংকে ঋণ আছে, মালিককে সিকিউরিটি মানি দেয়া আছে, আবার দোকানে লাখ লাখ টাকার মালামাল আছে। এসব বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান করতে আমাদের আরও এক বছরের মতো সময় প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, আমরা এ সময়টুকু পেলে আমরা নিজেদেরকে গুছিয়ে নিতে পারব। তখন সিটি কর্পোরেশন নিয়ম অনুযায়ী মার্কেটের ভবন ভেঙে ফেললে আমাদের সমস্যা নেই। এর আগে আমরা মার্কেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারব না। সময় বৃদ্ধির আশ্বাস না দেয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তাও ছাড়তে পারব না।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর কর্মকর্তারা পরিত্যক্ত বহুতল ভবনটি সিলগালা করার ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিবাদ হিসেবে সড়ক অবরোধ করেন ব্যবসায়ীরা।
এ সময় গুলশান-১ নম্বর চত্বরের রাস্তা সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বন্ধ করে দেন তারা। এর ফলে গুলশান চত্বর দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
যানচলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা পড়েন চরম বিপাকে। বাস তো বন্ধই রয়েছে, কেউ যদি মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে চাই তাদেরও আটকে দিচ্ছেলেন আন্দোলনকারীরা।