ডলারের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। এটা আরও এক বছর থাকতে পারে। আগামীতে ডলার সংকটের তীব্রতা কিছুটা কমবে। তবে দাম আরও বাড়বে। ১৪ মাস ধরে দেশে প্রচণ্ড ডলার সংকট চলছে। গত বছরের মে মাসে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ছিল। গত জুনে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকায় উঠেছে। ওই সময়ে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ২২ টাকা বা ২৬ শতাংশ। সব খাতেই আনুপাতিক হারে এর দাম বেড়েছে। আমদানিতে ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা ২৫ পয়সা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০৯ টাকা ৩৫ পয়সা। ওই সময়ে এর দাম বেড়েছে ২২ টাকা ১০ পয়সা বা ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ছিল ৮৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। দাম বেড়েছে ২৬ টাকা বা ৩০ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং পণ্য আমদানিতে ব্যয় বাড়বে। কমবে টাকার মান, দ্রব্যমূল্য বাড়বে। ঘাটতি দেখা দেবে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে।
পুরো অর্থনীতিকে আক্রান্ত করবে ডলারের দাম বৃদ্ধি। তারা বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রেমিট্যান্স, রপ্তানিসহ সার্বিকভাবে ডলারের আয় বাড়াতে হবে।
সূত্র জানায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমদানি ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে বৈশ্বিক মন্দায় দেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। একদিকে ডলারের আয় কমেছে, অন্যদিকে ব্যয় বেড়েছে। এতে ডলারের সংকট দেখা দেয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হলে মে মাসে গিয়ে ডলার সংকট প্রকট হয়। এর আগে এপ্রিল থেকেই আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। জুন থেকে এ নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানো হয়। গত আগস্ট থেকে ডলারের সংস্থান ছাড়া এলসি খোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ এসেছে। এতে দেশের শিল্প ও ভোক্তা খাতের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পণ্যের দাম। একই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দাম। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার গতিতে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে এখন বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে আট মাস ধরে। এর মধ্যে সাত মাস ধরে ডলারের দাম প্রতি মাসে গড়ে এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ২ জুলাই থেকে বাড়ানো হয়েছে ৫০ পয়সা করে। ফলে এখন রপ্তানির ডলার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করে কেনা হচ্ছে। একই সঙ্গে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ সরকারি প্রণোদনাসহ প্রতি ডলারে পাওয়া যাবে ১১১ টাকা ২৫ পয়সা। সব খাতে দাম বাড়ায় আমদানিতেও ডলারের দাম বেড়েছে। এখন সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৩৫ পয়সা করে এ খাতে ডলার বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংক ১১২ থেকে ১১৪ টাকা করেও বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে ১২২ টাকা করে ব্যাংক ডলারের দাম রাখছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ব্যাংকাররা ডলারের দাম রাখছেন লুটের মালের মতো। যখন যা খুশি ১১৩-১১৪ টাকাও দাম রাখছেন।
২০২১ সালের জুলাইয়ে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা। ২০২২ সালের এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকায়। এর পর থেকেই পাগলা ঘোড়ার গতিতে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। মে মাসে বেড়ে ৮৭ টাকা ছাড়িয়ে যায়। জুনে ৫ টাকা বেড়ে হয় ৯২ টাকা। জুলাইয়ে ২ টাকা বেড়ে হয় প্রায় ৯৪ টাকা। আগস্টে এক টাকা বেড়ে হয় প্রায় ৯৫ টাকা। সেপ্টেম্বরে আরও ৫ টাকা বেড়ে প্রায় ১০০ টাকায় ওঠে। তবে ওই মাসে মাঝে মধ্যেই ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় ডলারের দাম। অক্টোবরে আরও ২ টাকা বেড়ে ১০২ টাকায় ওঠে। নভেম্বরে ১০৩ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ডিসেম্বর থেকে প্রতি মাসেই গড়ে এক টাকা করে বাড়তে থাকে।
এদিকে ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। তারপরও দাম বেড়েছে। এখন সর্বোচ্চ ১১২ টাকা করে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রায় সব ব্যাংকই ১১০ টাকার মধ্যে বিক্রি করছে। গত বছরের মে মাসে নগদ ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৮ টাকা।
হুন্ডির একটি বড় বাজার হচ্ছে কার্ব মার্কেট। করোনার পর থেকে এখানে ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে কম ছিল। গত বছরের মাঝামাঝিতে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপে এর দাম কিছুটা কমলেও পরে আবার বেড়েছে। কারণ ওই সময়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার করতে ডলার কিনেছে অনেকে। যে কারণে কার্ব মার্কেটে এর দাম বেড়েছে। এখন কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার গড়ে ১১৪ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com