সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে আবার যুক্ত করতে চায় বিএনপি। আন্দোলনে জামায়াত কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
দল দুটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে যে দূরত্ব ছিল তা অনেকটা কমেছে। যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত প্রত্যক্ষ নাকি পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখবে, এখন সেই কৌশল নিয়ে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আলোচনা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই দলের দুজন নেতা বলেন, গত ২৮ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশের আগে ও পরে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে জামায়াতের নৈতিক সমর্থন ছিল। তবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেননি। যুগপত্ভাবে পৃথক সমাবেশও করেনি দলটি।
গত ডিসেম্বরে যুগপৎ আন্দোলনের শুরুতে দুটি কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে ছিল জামায়াত। এর পর থেকে তারা এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। তবে কর্মসূচি প্রণয়নে তাদের মতামত না নেওয়া, যুগপৎ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে প্রতিবাদ না জানানোয় ক্ষুব্ধ হয় দলটি। দলের আমির শফিকুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পরও বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালে দুই দলের মধ্যে দূরত্বও তৈরি হয়।
গত ১০ জুন ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশ নিয়ে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাতের অভিযোগ ওঠালে বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের আরেক দফা অবনতি হয়। পরে ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়।
তবে ৩ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের সাজা দেওয়ার ঘটনায় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে জামায়াত। এ বিষয়টি উল্লেখ করে দুই দলের নেতারা বলছেন, এই বিবৃতি দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ ও দূরত্ব কমার ইঙ্গিত দেয়।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি এখন আর জামায়াতের বিষয়ে খুব বেশি কৌশলী থাকতে চাইছে না।
দলের নেতাদের কারো কারো মনোভাব হলো, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করছে, সেখানে বিএনপির কৌশলী থাকতে হবে কেন?
জামায়াতের সঙ্গে বর্তমান নিবিড় যোগাযোগের কারণ হিসেবে বিএনপির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে জোটে বিভক্তি তৈরি করতে চান না তাঁরা। যদিও জামায়াতের ব্যাপারে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কয়েকটি দলের আপত্তি আছে। তাই সব কূল রক্ষা করে কিভাবে জামায়াতকে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এসব বিষয়ে গত সপ্তাহে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে জামায়াত একই দিন কর্মসূচি দেবে নাকি আরো কিছুদিন নিজেদের মতো আন্দোলন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবে, এ বিষয়ে দুই দলের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়ছে, এখন থেকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের আগে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। তবে তা আপাতত আনুষ্ঠানিক না-ও হতে পারে।
গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর এখন যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিরত আছে। নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি নেতারা জানান, নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে এরই মধ্যে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বিবেচনায় রেখে তার কয়েক দিন পর নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিতে জামায়াত অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে দলটির নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে বিএনপি শুরু করুক, তারপর দেখা যাবে। তবে জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলনে শক্তভাবে থাকবে।