এখন পর্যন্ত চলছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা। এসব মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে অধিকাংশ মৃত্যুর জন্য অবহেলাই দায়ী। রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও লক্ষণ ডেঙ্গু। চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন অনেকে। কিন্তু পরবর্তীকালে জটিলতা হলে চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালের শরণাপন্ন হন। ঐ সময় চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, বিলম্বে আসার কারণে রোগীর অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। অত্যধিক রোগীর চাপের কারণে চিকিৎসকদেরও অবহেলা দেখা যায়। ডেঙ্গু রোগীর রিপোর্ট নেগেটিভ হলে, অনেক চিকিৎসক গুরুত্ব দিতে চান না। অথচ সেবাপ্রত্যাশীর শরীরে লক্ষণ ডেঙ্গুর। এ কারণে ডাক্তাররা বলেন, উপসর্গই যথেষ্ট। ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা সেবা থেকে যেন কোনো ধরনের বিলম্ব করা না হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেই মনে করবেন না ডেঙ্গু হয়নি। এই ভেবেই বাসায় বসে থাকলে জটিলতা আরও বাড়বে এবং মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও যদি লক্ষণ ও উপসর্গ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। প্লাটিলেট কমছে কি না সেটা দেখতে হবে। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এনএস-১ পরীক্ষা করলে পজেটিভ হতে পারে। পাঁচ-ছয় দিন পর পরীক্ষা করলে নেগেটিভ আসে। সপ্তম দিনে আইজিএম পরীক্ষা করলে পজেটিভ রিপোর্ট আসবে। এর দুই দিন পর পরীক্ষা করলে নেগেটিভ আসবে। তখন আইজিজি পরীক্ষা করাতে হবে। এভাবে রোগীকে ধাপে ধাপে পরীক্ষা করে দেখতে হবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কি না। একই সঙ্গে প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করতে হবে। নিজেরা কোনো একটি পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়ে বসে থাকলে হবে না। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে খামখেয়ালি করলে বিপদ, মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। অনেক সময় ডাক্তাররাও খামখেয়ালিপনা করেন। তবে এটা ঠিক নয়। রোগীর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জেনে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ বলেন, শিশুদের উপসর্গ দেখা মাত্রই ডেঙ্গুর নানা ধরনের টেস্ট করতে হবে। যেমন এফজিপিটি, এফজিওটি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তবে উপসর্গ থাকলে বসে থাকলে হবে না। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে। নিপসনের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এনএস-১ পরীক্ষা করলে পজেটিভ রিপোর্ট আসবে। তবে আক্রান্তের চার-পাঁচ দিন পর পরীক্ষা করলে ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট আসবে। এই সময়ে ভাইরাস এন্টিবডি ডেভেলপ করায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর করতে হবে আইজিজি, আইজিএম (এন্টিবডি) পরীক্ষা করে শনাক্ত করা যায়। দেশে মশা মারা হচ্ছে কি না তা নিয়মিত মনিটরিং করার পরামর্শ দেন তিনি।
চলতি মাসের মাঝামাঝিতেই এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা আগের পুরো মাসের হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে। গত একদিনে আরও ১৩ জনের মৃত্যু এবং ১৯৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। আগস্টের প্রথম ১৮ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ২১৫ জনের। দেশ জুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার মধ্যে গত জুলাইয়ে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সবশেষ মৃত্যুর এ তথ্যসহ এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৬৬ জন মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৬০ জন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com