মামলা হয়েছে আপনার নামে, তা জেনে হন্তদন্ত হয়ে পড়েছেন? এদিক-সেদিক দৌড়ঝাঁপ করে ক্লান্ত ! হয়েছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় । এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত মাথায় আসবে না এটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি, মাথা ঠান্ডা করে, আইনগত পদক্ষেপ নেন তবে সেটি অবশ্যই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
দেশের চলমান ইস্যুতে বিষয়টি নিয়ে জন সাধারণের জানার পারদ বেড়েছে বহুমাত্রায়। একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে দুই ধরনের মামলা হতে পারে-
ক. দেওয়ানি মামলা খ. ফৌজদারি মামলা। মূলত কোনো সম্পত্তি ও পদের অধিকার বা অন্য যেকোনো অধিকার থেকে দেওয়ানি মোকদ্দমার উদ্ভূত হয়। দেওয়ানি প্রকৃতি বা সিভিল মোকদ্দমা হলো জমি-জমা, পারিবারিক বিষয়, বিয়ে-শাদি, তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব, দেনমোহর, খোরপোষ, আর্থিক লেনদেন, ব্যবসা বাণিজ্যের চুক্তি, ক্রয়-বিক্রয়,চাকরি-বাকরি, কপিরাইট, বিভিন্ন পদ-পদবি ইত্যাদি বিষয়ে বাদী প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা দাখিল করেন। স্বাভাবিকভাবে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হলে আপনার জেল হাজতের ভয় নেই।
আর ফৌজদারি মামলা হলো চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণ, খুন, প্রতারণা, বে-আইনি সমাবেশ, ইভটিজিং, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, জালিয়াতি, মাদক কারবারি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত মামলা হচ্ছে ফৌজদারি মামলা বা ক্রিমিনাল কেস।
ফৌজদারি মামলা দুই স্থানে দাখিল হয়। ক. থানায় খ. আদালতে। থানায় মামলা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটি আদালতে স্থানান্তরিত করেন। আমরা এই ধরনের মামলা কে জি.আর (জেনারেল রেজিস্ট্রার) মামলা বলি। আর যখন কোনো সংক্ষুব্ধ পক্ষ বা বাদী সরাসরি আদালতে গিয়ে বিজ্ঞ অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে মামলা দাখিল করলে সেটিকে আমরা পিটিশন রেজিস্ট্রার এবং সি.আর (কমপ্লেইন্ট রেজিস্ট্রার) বলে থাকি। বলা ভালো সি.আর এবং পিটিশন রেজিস্ট্রার প্রায় একই জিনিস। জেলা বারের আদালতের ভিন্নতার ক্ষেত্রে এই দুটোকে পৃথক করা হয়ে থাকে।
সি. আর মামলায় বিজ্ঞ আদালত সাধারণত তিনটি পদক্ষেপ নেয়। বিবাদী বা আসামীর প্রতি সমন দেবেন; তদন্ত দিতে পারেন অথবা ওয়ারেন্ট দিতে পারেন।
এখন আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনার নামে কি ধরনের মামলা হয়েছে? যদি সি.আর মামলা হয় তবে অবশ্যই আদালতে যেতে হবে। আদালতে যাওয়ার পর আপনার বিশ্বস্ত একজন অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে আদালত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বুঝেন এমন কোন ক্লার্ক, মুহুরির মাধ্যমে আপনার নামে মামলা হয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিন্তে বের করা সম্ভব। বলে রাখা ভালো কোন দালালের খপ্পরে যেন না পড়েন। অবশ্য আপনি যদি একটু সচেতন হোন ব্যাপারটি আরও সোজা হবে। প্রত্যেকটি জেলার থানাভিত্তিক কোর্ট আছে। সেই হিসেবে বাদী যে অঞ্চলে বসবাস করেন বা ঘটনাটি যে এলাকায় সংঘটিত হয়েছে সেই জেলার ওই অঞ্চলের এখতিয়ারাধীন কোর্টে খবর নিলেই সহজে বুঝতে পারবেন আপনার নামে কোন মামলা হয়েছে কিনা ?
আর যদি আপনি মনে করেন মামলাটি থানায় হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি নিজে থানায় কখনোই যাবেন না। খোঁজ নিতে আপনার বাবা, মা, নিকট আত্মীয়, শুভাকাঙ্খীদের থানায় পাঠাবেন। থানায় যদি মামলা হয় আর সেটি যদি আমলযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য ধারায় হয় তবে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অ্যারেস্ট করে কোর্টে চালান করে দিবে। আমলযোগ্য অপরাধ হলো বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীত পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারে। আর আমল অযোগ্য অপরাধ হলো ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪, ১৫৫ ও দ্বিতীয় তফসিলে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধান রয়েছে।
তাই অপরাধের ধরন যদি গুরুতর হয় তবে অবশ্যই আপনি মহামান্য হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেবেন। থানায় ও আদালতে খোঁজ নেওয়ার পর যদি আপনি জানেন আপনার নামে মামলা হয়েছে তবে অবশ্যই আপনার বিশ্বস্ত একজন অ্যাডভোকেটকে মামলায় নিয়োগ করবেন।
অ্যাডভোকেট আপনার মামলার সবকিছু দেখভাল করবেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com