আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে জটিলতা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা সংবিধানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নির্বাচন করতে উন্মুখ।
অন্যদিকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় বিএনপিসহ সমমনা বিভিন্ন জোট ও দল। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে দুই বড় দলের মুখোমুখি অবস্থানে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। তাতে ঘি ঢালে ইউরোপ ও আমেরিকার কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ এবং মার্কিন ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা। এর প্রভাবে মনস্তাত্ত্বিক চাপে পড়ে যান ক্ষমতাসীনরা। তৃণমূলে চলতে থাকে নানা কানাঘুষা। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ অনেটা গুমোট হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন বদলে গেছে পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ-সেলফি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সম্মান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর এবং সর্বশেষ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকায় আগমন সবকিছু মিলিয়ে চাপমুক্ত হয়ে চাঙ্গা আওয়ামী লীগ। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সব স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে ফুরফুরে ভাব।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত মিথ্যাচার, লবিস্ট নিয়োগ করে বিদেশিদের কাছে অপপ্রচারে একটি বিভ্রান্তির জাল সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। ওই জোটের সদস্য না হয়েও বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বনেতাদের সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে সেই মেঘ কেটে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই যে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন সম্ভব, তা জনগণের কাছে আরো স্পষ্ট হয়েছে।
সম্প্রতি আন্দোলনে চাঙ্গা হয়ে উঠে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। মার্কিন ভিসা নীতি ও কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের প্রভাব পড়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে।
ওই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে অনেকেই একটু ঘাবড়ে যান। তারপর স্যাংশন, ভিসা নীতি ইত্যাদি। এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ভয়কে জয় করেই বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলেই এগিয়ে গেছে।
জানা গেছে, ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়া, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার বন্ধের দাবিতে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টসহ নোবেল বিজয়ীদের আহবান সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সে দেশটির কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ধরে নিয়েছিলো আওয়ামী লীগের তৃণমূল। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের অবস্থান নেতিবাচক ও দেশের নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হুঁশিয়ারিতে তৃণমূল চাপে পড়ে যায়। এ গুমোট পরিস্থিতি কেটে যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের মাধ্যমে। সদস্য দেশ না হয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ এবং এ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা যে সম্মান দেখিয়েছেন, তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের ইতিবাচক অবস্থানে তৃণমূলে চাঙ্গা ভাব নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে গত ৯ সেপ্টেম্বর জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছেন। ছবির ভাষা বলছে, তিনি যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গেই ছবি তুলেছেন। বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি ভাইরালের মতো প্রচার হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুরু হয় হৈচৈ।
সূত্র জানায়, বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার অনানুষ্ঠানিক আলাপ বেশ আন্তরিকভাবেই হয় এবং আলাপের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ক্ষমতাসীনদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এতদিন বিএনপি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাইডেনের সেলফি দেখে বিএনপির এখন পশ্চাৎযাত্রা শুরু হয়েছে। তাদের নেতাকর্মীরা বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেখে হতাশার নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, সাধারণ জনগণকে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলো বিএনপিসহ বিরোধীরা। তবে জি-২০ সম্মেলনে আমরা দেখলাম বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন, এতেই প্রমাণ করে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ়। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্রোতের প্রতিকূলে চলেই অভ্যস্ত।
রাজনীতিতে হাওয়া পাল্টে যাওয়া শুরু হয় জি-২০ সম্মেলনের শুরুর আগের দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হাস্যোজ্জ্বল ও আন্তরিক বৈঠকের মাধ্যমে। যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে জি-২০ সম্মেলনে। বাংলাদেশ-ভারতের দুই নেতার বৈঠকের পর নয়াদিল্লি স্পষ্ট বার্তা দেয়, তারা অব্যাহত উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়।
জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বের অনেক দেশের নেতারাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সম্মান জানান। এমনকি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও হাঁটুগেড়ে বসে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, যা সারাবিশ্বের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তোলে।
এছাড়া জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে ভারতে যাওয়ার এক দিন আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ আওয়ামী লীগের পালে হাওয়া দেয়। জি-২০ থেকে ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার আগে দু-দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে সুসম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ তৃণমূলের মনোবল আরও এক ধাপ চাঙ্গা করে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জি-২০ সম্মেলনের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলনে যেখানে বিশ্বের ক্ষমতাধর ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ অংশ নেয়, সেই সম্মেলনে সদস্য না হয়েও বাংলাদেশ অংশ নেয়া অত্যন্ত গৌরবের। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের মধ্যমণি ছিলেন শেখ হাসিনা। বিশ্বনেতাদের এ আচরণ আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি আনন্দিত ও গর্বিত করেছে দেশবাসীকে। এর প্রভাব অত্যন্ত সুদৃঢ়। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব টের পাওয়া যাবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com