ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা ‘শূন্য থেকে হয়নি’– জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এমন মন্তব্যের পর এবার সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।
বুধবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘকে ঝাঁকি দেয়ার সময় হয়েছে।’
এরডান জানান, সংস্থাটির মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান মার্টিন গ্রিফিটস ইসরায়েলে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
এরডান বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমি তাদেরকে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জানিয়েছি।
মার্টিন গ্রিফিথ এ অঞ্চলে আসতে পারবেন না উল্লেখ করে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোতে সব সময় নতুন লোক আনা দরকার। বিশেষ করে এখনকার মতো সময়ে তা বেশি দরকার। তাদের (জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা) ভিসা দেয়া হবে না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘ মহাসচিবের ফোন ধরতে চাননি বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান। তিনি বলেছেন, এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর আন্তোনিও গুতেরেস একবারও ইসরায়েলে আসেননি।
এরডান বলেন, গুতেরেস ৭ অক্টোবরের পর দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নেতানিয়াহু তার কল ধরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেন, সবাই জানে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। তারপরেও গাজা কর্তৃপক্ষের দাবি সত্য বলে ধরে নিয়ে জাতিসংঘ মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে ‘একটি মিথ্যা চিত্র’ তৈরি করেছে।
গিলাড এরডান বলেন, তার দেশের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ইসরায়েল সম্পর্কে বৈরী মনোভাবে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের বের করে দেওয়া। যারা সেখানে কী ঘটছে সে বিষয়ে ‘মিথ্যা চিত্র’ দিচ্ছেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনের উদ্বোধনীতে বক্তব্য দেন আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, হামাসের হামলা শূন্য থেকে হয়নি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারির শিকার। তারা তাদের ভূখণ্ড বসতিতে (অবৈধ ইহুদি বসতি) পরিণত হতে দেখেছেন। সহিংসতায় জর্জরিত হতে দেখেছেন।
গুতেরেস আরও বলেন, তবে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা হামাসের ভয়ংকর হামলাকে ন্যায্যতা দিতে পারে না। আবার এই হামলার জেরে ফিলিস্তিনি জনগণকে সম্মিলিত শাস্তি দেয়ার বিষয়টি ন্যায্যতা পেতে পারে না। গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েলে। এরপর থেকে গাজায় পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে উপত্যকার লাখ লাখ বাসিন্দা। গত ১৮ দিনে গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছে।
হামাসের হামলার পরপরই গাজায় পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এতে চরম মানবিক সংকটে পড়েছে ২৩ লাখ গাজাবাসী।