ভারতীয় সিনেমা ‘পিপ্পা’-য় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’-র সুর বিকৃত হয়। নেটদুনিয়ায় বিষয়টি নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। এ কারণে সিনেমাটির নির্মাতার পক্ষ থেকে সম্প্রতি ক্ষমা চাওয়া হয়। তবে সে ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করেছেন কবি নজরুলের পরিবার।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়েছেন সিনেমাটির নির্মাতারা। কিন্তু সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী ও নাতি অনির্বাণ কাজী।
‘পিপ্পা’ সিনেমার নির্মাতাদের চিঠিটি শেয়ার করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনিন্দিতা কাজী। তিনি লিখেছেন, এ ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা ও চিঠি গ্রহণযোগ্য নয়। মিডিয়ার এক বন্ধুর কাছ থেকে এটি পেয়েছি। কিন্তু এর সত্যতা কি? এ চিঠিতে ‘লেটার হেড’ নেই, কারও কোনো স্বাক্ষর নেই। আমি মনে করি, এই চিঠি বিশ্বাস করার আগে সেই প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমি এটি শেয়ার করছি। তাদের কি ‘লেটার হেড’ নেই? এটি আশ্চর্যজনক বিষয়! এই চিঠি মূল্যহীন।
‘পিপ্পা’ সিনেমার নির্মাতাদের চিঠিটি প্রত্যাখ্যান করার কথা উল্লেখ করে অনিন্দিতা কাজী বলেন, যে চিঠি সাদা একটি কাগজে লেখা, সত্যতা ছাড়া সেই চিঠি আমরা গ্রহণ করব না। এটি কোনোভাবেই অফিশিয়াল চিঠি বা বিবৃতি হতে পারে না। টিমের সদস্যদের স্বাক্ষর সমেত আমরা অথেনটিক চিঠি এবং মূল চুক্তিপত্র চাই।
জানা গেছে, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি নতুনভাবে তৈরির জন্য কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ প্রয়াত কল্যাণী কাজী ও কবির নাতি কাজী অরিন্দমের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয় ওই বিবৃতিতে।
এ বিষয়ে বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, গানটি ব্যবহারের জন্য কল্যাণী কাজীর সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছিল, যার সাক্ষী ছিলেন কাজী অনির্বাণ। গানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে শ্রদ্ধা জানানোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। গানের কথা ব্যবহার ও সুরের পরিবর্তন চুক্তি অনুযায়ী হয়েছে।
বিবৃতিতে সবশেষে ক্ষমা চেয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ গানের মূল কম্পোজিশন নিয়ে শ্রোতাদের আবেগ আমরা বুঝতে পারছি। যেহেতু প্রতিটি শিল্পই মূলগতভাবে বিষয়কেন্দ্রিক, আমাদের সংস্করণটি যদি কারও ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে থাকে, তাহলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।
তবে কাজী নজরুল ইসলামের নাতি ও কল্যাণী কাজীর পুত্র অনির্বাণ কাজী সুর পরিবর্তনের অনুমতির কথা অস্বীকার করে ভারতীয় গণমাধ্যমে অনির্বাণ কাজী বলেন, এই গানের সুর বদলানোর অনুমতি আমার মা কখনও দেননি। গানের কথা ব্যবহার করা হলেও সুর বদলানো যাবে না, এই শর্তেই তারা নির্মাতাদের স্বত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অসম্মানজনক ঘটনার পর এক্সে (টুইটার) পোস্ট করে ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়। তারা এখন সিনেমাটি থেকে গানটি সরিয়ে ফেলতে পারে। পাশাপাশি ক্রেডিট লাইন থেকে আমার ও আমার মায়ের নাম মুছে ফেলতে পারে।