ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলার মধ্যেই প্রথমবারের মতো হামাসের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। চুক্তিটি অনেকটা কাছাকাছি রয়েছে বলে জানিয়েছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া।
আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, আনাদোলুর বরাত জানা গেছে, মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) কাতারে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। আজই যেকোনো সময় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে খবরে জানানো হয়েছে।
হানিয়া বলেন, আমরা (ইসরায়েলের সঙ্গে) একটি সমঝোতা চুক্তির কাছাকাছি রয়েছি। কাতারের মাধ্যমে আমরা এই চুক্তির প্রস্তাব পেয়েছি এবং তাতে সম্মতিও দিয়েছি।
তবে সম্ভাব্য এই সমঝোতা চুক্তিতে কী কী শর্ত রয়েছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি থাকা হামাস নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারটি শীর্ষে রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন হামাস কর্মকর্তা ইজ্জাত আল রিশক। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে থাকছে গাজার সব এলাকায় ত্রাণের ট্রাকের প্রবেশ ও ত্রাণ সরবরাহের পরিবেশ তৈরি করা এবং যারা ইসরাইলের হামলায় আহত হয়েছেন তাদেরকে গাজার বাইরে অন্য দেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
এ হামাস কর্মকর্তা আরও বলেন, চুক্তিতে বন্দি বিনিময়ের বিষয়টিও থাকছে। চুক্তির আওতায় বন্দি ইসরাইলি নারী ও শিশুদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মুক্তি দেয়া হবে।
আল রিশক জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তির লক্ষ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আলোচনা চলছে। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনও নিশ্চিত করেননি। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সবগুলো ব্রিগেডই এরই মধ্যে ফোনের মাধ্যমে চুক্তিতে সম্মতি জানিয়েছেন বলেও জানান এই হামাস কর্মকর্তা।
সোমবার (২০ নভেম্বর) ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল কান জানিয়েছিলো, গাজায় হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় ইসরায়েল। এই সমঝোতার শর্ত— যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে থাকা হামাস নেতা-কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
এর আগে একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি জানিয়েছিলেন, গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দু’পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতার একটি পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আমরা আশা করছি এটি হবে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে,’ হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন কিরবি।
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। জবাবে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ জনে। যার অর্ধেকেরই বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া এদিন জাতিসংঘের একাধিক আশ্রয়কেন্দ্রও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উত্তরে ইন্দোনেশিয়ান হসপিটাল ও কামাল আদওয়ান হসপিটাল এলাকা ঘেষেও এই মুহূর্তে হামলা চলছে।