‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে কৃষকদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তাসহ একাধিক দাবিতে মাঠে নামে তারা।
আজ (মঙ্গলবার) প্রতিবাদী কৃষকরা পাঞ্জাব-হরিয়ানার (শম্ভু) সীমান্তে পুলিশের ব্যারিকেডের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করলে হরিয়ানা পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এরপর সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কৃষকদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই দিল্লি সীমান্তে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে দিল্লিতে আসার সমস্ত সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে।
সিঙ্ঘু, টিকরি এবং গাজীপুর সীমানায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ কাঁটাতারের পাশাপাশি ব্যারিকেড, বড় বড় সিমেন্টের ব্লক, কন্টেইনার এবং অন্যান্য অবরোধ সৃষ্টি করেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি হরিয়ানার সিঙ্ঘু সীমান্তে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ড্রোনের সাহায্যে গোটা এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শম্ভু সীমান্তে কৃষকদের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হলে কৃষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এসময়ে তারা একটি ওভারব্রিজের রেলিং ভেঙে দিয়েছেন। বিক্ষোভকারী কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ পানি কামান ব্যবহার করেছে। আজ হরিয়ানা পুলিশ বেশ কিছু কৃষককে আটক করেছে এবং তাদের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে।
গতকাল কৃষক ইউনিয়নের নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং অর্জুন মুন্ডার মধ্যে দ্বিতীয় দফার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর কৃষক নেতারা ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কৃষকরা আজ ফতেহগড় সাহিব থেকে রওয়ানা হলে শম্ভু সীমান্তে তাদের থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। জানা গেছে, হরিয়ানা পুলিশ আজ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে এবং বিক্ষোভকারী কৃষকদের উপর নজর রাখতে ড্রোন ব্যবহার করেছে।
আজ পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা উচিত এবং সমস্ত সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিত। সব পক্ষকে বসে বিষয়টির সমাধান করতে হবে। বলপ্রয়োগ শেষ অবলম্বন হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত,২০২০ সালে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে ধর্না-অবস্থানে বসেছিলেন কৃষকেরা। পরে তিনটি আইনই বাতিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমানে আন্দোলনে নামা কৃষকদের দাবি- ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মওকুফ করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০/২১ সালের প্রতিবাদ আন্দোলনের সময়ে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবিও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে আজ মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, এটা মোদী সরকারের ব্যর্থতা। তাদের উচিত ছিল কৃষকদের দাবি পূরণ করা। স্বামীনাথন কমিশনের ফর্মুলা, এমএসপি গ্যারান্টি আইন কার্যকর করা উচিত। সরকার কেন সময় নষ্ট করছে?
জানা গেছে, কৃষকদের মূল তিনটি দাবি হল— ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মওকুফ এবং স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ। কৃষকদের এক প্রতিনিধির অভিযোগ, দু’বছর আগে কৃষকদের অর্ধেক দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় সরকার কিছুই করেনি।
কৃষকদের বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী পাঞ্জাব কিষাণ মজদুর সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিং পান্ধের বলেছেন, শম্ভু সীমান্তে ১০ হাজার কৃষক উপস্থিত রয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকরা শান্তি বজায় রাখছে, কিন্তু ড্রোন থেকে তাদের দিকে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান সারওয়ান সিং পান্ধের। এদিকে, ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচিতে কৃষকদের সমর্থনে তামিলনাড়ুতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সেখানে কাপড় ছাড়া রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করেছেন কৃষকেরা।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com