আমানতদারি রিজিক বাড়ায়, খিয়ানত ও অবিশ্বস্ততা দারিদ্র আনে: হাদিস
মাপে কম দেয়ার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল মাদায়েন শহর এবং সেখানে বসবাসকারী সম্প্রদায়। পবিত্র কুরআনে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের ৬টি সুরায় মাপে বা ওজনে কম দেয়ার নিন্দা রয়েছে।
মাপে কম দেয়া বা ওজনে কারচুপি করার বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ সুরা আর-রাহমান-এর সপ্তম ও অষ্টম আয়াতে বলেছেন, তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদণ্ড সবকিছুতে যাতে তোমরা সীমালঙ্ঘন না কর হিসাবে ও তুলাদণ্ডে।
সুরা মুতাফাফফিন-এর এক থেকে চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে আল্লাহর বিচারালয়ের সামনে।
– একইভাবে ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করাও হালাল রিজিক অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের দুর্যোগ। ব্যবসায় জড়িত বা বাজারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ বেশি দামে পণ্য বিক্রির অর্থ হারাম। তাই বর্ধিত অবৈধ অর্থ প্রাপকের কাছে ফেরত দেয়া উচিত। মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) বলেছেন, পণ্যের মূল্য ও মানের বিষয়ে ক্রেতাকে ধোঁকা দেয়া হারাম, অথচ ক্রেতা এ বিষয়ে বিক্রেতার ওপর আস্থা রাখে।
মহানবী (সা) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি প্রয়োজনের চেয়েও বেশি খাদ্য কিনে ও চল্লিশ দিন পর্যন্ত তা মজুদ করে রাখে ওই খাদ্যের দাম বেড়ে যাবে এই আশঙ্কায় তাহলে সে গোনাহ করল। সে যদি ওইসব খাদ্য বিক্রি করে সেইসব অর্থ সাদাকা দেয় তাহলেও ওই গোনাহর কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত হবে না।
পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের ৮৪ থেকে ৮৬ নম্বর আয়াতে, মহান আল্লাহ শিরক ও মূর্তিপূজার চেতনা থেকে উদ্ভূত একটি অর্থনৈতিক দুর্নীতির বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেই সময়ে “মাদায়েন” শহরের মানুষের মধ্যে এই দুর্নীতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। আল্লাহ বলেছেন: ক্রয়-বিক্রয়ের সময় জিনিসের পরিমাপ ও ওজন কমাবে না ।
বিশিষ্ট আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুজতবা কালবাসি’র (যিনি মাহদাভিয়্যাত বা মাহদিবাদ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান) মতে কেনা-বেচা ও পরিমাপের কারচুপি নানা ধরনের। কেউ কোনো পণ্য উৎপাদন করে তার প্যাকেটে ওই পণ্যের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ সম্পর্কে যদি এমন কিছু লিখে থাকেন যার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না থাকে তাহলে তিনি মিথ্যাচারে বা কারচুপিতে জড়িত হলেন। কেউ কর্মক্ষেত্রে বা চাকুরির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মাত্রায় কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও যদি যদি কম কাজ করে থাকেন তাহলে তাও মাপে কম দেয়ার সমতুল্য। তাঁর মতে পবিত্র কুরআন ন্যায্যতা বজায় রাখার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে। পণ্যের অতিরিক্ত প্রশংসা করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা অথবা কারো কাছ থেকে পণ্য কেনার সময় পণ্যটির ব্যাপক বদনাম করে কম দাম দেয়াও হচ্ছে কারচুপি বা অনিয়ম যা অবৈধ।
মহানবীর (সা) হাদিসে বলা হয়েছে: আমানতদারির কারণে রিজিক বাড়ে কিন্তু খিয়ানত ও অবিশ্বস্ততা দারিদ্র আনে।
মুজতবা কালবাসি আরও বলেছেন, কোনো একটি সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য পুলিশ ও বিধি-বিধান একা তেমন কিছু করতে পারে না, বরং মানুষের ভেতরে তথা চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে ঠিক যেভাবে নবী-রাসুলবৃন্দ সমাজ পরিবর্তনের জন্য মানুষের ভেতরেই পরিবর্তনে সক্রিয় ছিলেন।