বর্তমান সময়ের কিছু ঘটনা খুব ব্যথিত করে তুলেছে। চোখের সামনে এসব ঘটলেও কেন যেন মেনে নিতে কষ্ট হয়।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন চলছে একের পর এক অপ্রতিকর ঘটনা । কেউ কেউ এসব পরিস্থিতিতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত মনে করলেও, চলছে অনেক অরাজকতাও।
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে মাসব্যাপী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা ও সশরীরে আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পারজোয়ার ব্র্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. জাহিদুল ইসলামকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বহিরাগতরা বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ৩০-৩৫ জন বহিরাগত শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তারা অফিস কক্ষে থাকা শিক্ষকদের জিম্মি করে ফেলে। একপর্যায়ে তারা সিনিয়র শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের কাছে একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বলেন। স্বাক্ষর না করলে অপমান-অপদস্ত করা হবে বলে ভয় দেখান। এতে জাহিদ বাধ্য হয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরপর বহিরাগতরা সহকারী প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যান। বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদকে জানানো হয়। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন ও সেই সঙ্গে ওই শিক্ষককে চিন্তা না করে শান্ত থাকতে বলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, বহিরাগতরা আমার সামনে একটি কাগজ দিয়ে বলে, ‘এখানে স্বাক্ষর করতে হবে, না হলে ক্ষতিসাধন ও চরম বেইজ্জত করা হবে।’ উপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীরা হতবিহ্বল হয়ে যান। আমি ভয়ে ওই কাগজটিতে বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর দেই। পরবর্তীতে জানতে পারি এটি স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র। তিনি বলেন, যে কাজটি বহিরাগত লোকজন করিয়ে নিল, তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি এবং অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিগত ৯ বছর যাবত এই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। আমার বিরুদ্ধে লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি নিজের হাতে লিখিত কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেইনি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক আরও জানান, "আমি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রথম থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সক্রিয় অংশগ্রহণ করি, এতে ম্যানেজিং কমিটির একটি পক্ষ ও স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) যার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষকরা সোচ্চার ছিলেন ১১ মাস পূর্বে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন । এজন্য প্রতিবাদী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লোকজন দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়টি আমাকে ও আমার পরিবারকে চরম বিপদের মুখোমুখি করবে। প্রতিষ্ঠানটিতে কয়েকমাস যাবথ সহকারী প্রধানশিক্ষকের সাথে অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে বিদ্যালয়ের তহবিল তসরুপ ও কোচিং বাণিজ্য রোধে আওয়াজ তোলায় দূরত্ব তৈরি হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক হয়ে বিদ্যালয়ের আয়ব্যয় নিজের ইচ্ছামাফিক খরচ করতেন। শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করতেন। এর প্রতিবাদ জানালে শিক্ষকদের বিভিন্নধরনের হুমকি ও চাকরিচ্যুতির ভয় দেখাতেন । সহকারী প্রধানশিক্ষকের বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করা সত্ত্বেও তিনি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেন নি। ভুক্তভুগি শিক্ষক বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন এবং তার চাকরির যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।"
তিনি আরও বলেন, আমার একটাই অপরাধ- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা ও সশরীরে আন্দোলনে যোগদান করা। (www.facebook.com/zahid.mamun.16)
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ মোবাইল ফোনে বলেন, চলমান অস্থিতিসীল পরিস্থিতিতে চাপে পরে আমি ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। যা উচিৎ হয় নি। পরবর্তীতে অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত বদলানোর সুযোগ রয়েছে । আমরা যথাসাধ্য ন্যায়সংগত বিবেচনা করার জন্য সময় প্রার্থনা করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমার পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষকের জন্য সকল সহযোগিতা থাকবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার বেআইনি ।
2023 DailyNews24BD.com