ঢাকাসোমবার , ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জীবনধারা
  6. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  7. বিনোদন ভুবন
  8. বিবিধ
  9. ভিডিও নিউজ
  10. রাজধানী
  11. রাজনীতি
  12. শিক্ষা
  13. সর্বশেষ
  14. সারাবাংলা
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাদক সম্রাটরা এখন নতুন ছাতার সন্ধানে

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৭, ২০২৪ ২:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজশাহী সংবাদদাতাঃ ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১২ পিএম। মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর সীমান্তবর্তী উপজেলা গোদাগাড়ী। সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া লালগোলায় রয়েছে হেরোইন তৈরির কারখানা।

বিজিবির সূত্র মতে, বাংলাদেশে হেরোইন পাচারের লক্ষে ১৭টির বেশি কারখানা রয়েছে লালগোলায়। ভারতের লালগোলা ও বাংলাদেশের গোদাগাড়ীকে বিভক্ত করেছে পদ্মা নদী। লালগোলা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে সীমান্ত লাগোয়া রয়েছে গোদাগাড়ীর আটটি গ্রাম। মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও ভারতীয় মাদক মাফিয়ারা বাংলাদেশে হেরোইনের চালান পাঠায় বিশেষ কৌশলে। তাদের এ মাদক পাচার সারা বছর ধরেই চলে।

ভারত থেকে এভাবে পাচার হয়ে আসা হেরোইন গোদাগাড়ীর মাদক সম্রাটদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়াসহ সারা দেশে। গোদাগাড়ীতে রয়েছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত শতাধিক হেরোইন সম্রাট। তাদের একটা অংশ গোদাগাড়ী, পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী মহানগরী, বগুড়া, ঢাকা-এমনকি বিদেশে অবস্থান করে মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব মাদক সম্রাটের অধিকাংশের বাড়ি গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায়। ১৫ বছর গোদাগাড়ীর মাদক সম্রাটরা সরকারের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় অবাধে বাণিজ্য করেছে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে তারা এখন রয়েছে নতুন ছাতার সন্ধানে। তারা এবার মাদক কারবার শুরু করেছে নতুন রূপে, নতুন উদ্যোমে। এসব শীর্ষ মাদক কারবারির অধিকাংশই অঢেল সম্পদের মালিক।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র মতে, দেশে আসা হেরোইনের ৯০ ভাগই ভারত থেকে আসে গোদাগাড়ী সীমান্ত পথে। এই গোদাগাড়ীতে হেরোইন পাচারে সক্রিয় রয়েছে শতাধিক তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে মাদকের মামলা। ১৫ বছর তারা স্থানীয় সাবেক সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় মাদকের কারবার চালিয়ে এসেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ৫ আগস্টের পর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও এখন ধাতস্থ হয়ে নতুন ছাতার তলে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা এবার কারবারে ফিরছে নতুন রূপে। মাঝে মাঝে পুলিশের অভিযোগে মাদকের ছোট-বড় চালান আটক হলেও শীর্ষ কারবারিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শীর্ষ মাদক সম্রাটরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশকে ম্যানেজ করে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব মাদক সম্রাট অতীতেও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশের ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে কারবার চালিয়েছে

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ বছরে গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক কারবারিরা রাজশাহী-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়মিত নাজরানা দিয়ে অবাধে কারবার চালিয়েছে। জানা গেছে পৌরসভার সারাংপুর, মাদারপুর, মহিষালবাড়ি, ডিমভাঙ্গা ও বিদিরপুর কেন্দ্রিক সক্রিয় রয়েছে মাদকের ছয়টি বড় ও শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারাই সিংহভাগ মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। এসব সিন্ডিকেটের আওতায় মাদক কেনাবেচা ও বহন করে শতাধিক ছোট কারবারি। পুলিশের অভিযানে বহনকারী ও মজুতকারীরাই ধরা পড়ছে। শীর্ষরা বরাবরই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

১৭ অক্টোবর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী চরকানাপাড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ৩ কেজি হেরোইনসহ সীমা বেগমকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, সীমা বেগম সীমান্তের ওপার থেকে আসা হেরোইন মজুত রাখতেন। এসব হেরোইনের মালিকও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। ৭ মে গোদাগাড়ীর দিয়াড় মানিকচক এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে র্যাব ৩ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে। দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও এই মাদকের মূল মালিক মাদারপুরের আব্দুর রহিম টিপু পালিয়ে যায়। জানা গেছে, শীর্ষ মাদক কারবারি টিপু সাবেক সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ভাগ্নে পরিচয়ে অবাধে মাদকের কারবার চালিয়ে এসেছেন। জানা গেছে, টিপু ও তার ভাইয়েরা পলাতক থেকেও বাইরে থেকেই মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর কিছুদিন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান প্রায় বন্ধ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করলেও বাহক ও মজুদকারী ছাড়া শীর্ষ কারবারির তেমন কেউই ধরা পড়ছে না। ৫ আগস্টের পর এসব মাদক সম্রাট নতুন করে সক্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সঙ্গে ভাব জমিয়ে তুলছে। ফলে পুলিশও এসব শীর্ষ কারবারির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আলম বলেন, মাদককারবারিরা যেখানেই আশ্রয়-প্রশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করুক, কোনো লাভ হবে না। ৫ আগস্টের পর কয়েকদিন মাদকবিরোধী অভিযানে কিছুটা ধীরগতি হলেও সম্প্রতি নতুন করে জেলায় মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে এবং কয়েকটি সফল অভিযানে বিপুল পরিমাণ হেরোইন উদ্ধারসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এই অভিযান চলবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।