ঢাকা, ৫ মে, ২০২৫ : বৈশ্বিক বাণিজ্য অঙ্গনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান শুল্ক যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি চীনের বেপরোয়া শুল্ক নীতি ও বাজার কৌশলের মুখে মার্কিন বাণিজ্য কৌশল বিপাকে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চীন তার অভ্যন্তরীণ শিল্প ও প্রযুক্তিখাতকে রক্ষা করতে কঠোর শুল্ক ও বাণিজ্য বাধা জোরদার করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
চীনের কৌশল: শুল্ক বাড়িয়ে প্রতিশোধ
চীন গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির জবাব দিতে নিজস্ব শুল্ক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য, ইলেকট্রিক যানবাহন (EV), সৌর প্যানেল এবং হাইটেক প্রযুক্তিপণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। এর ফলে অ্যাপল, টেসলা, ইন্টেল এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের ব্যবসায় মারাত্মক ধস নেমেছে।
চীনের এই পদক্ষেপকে “অর্থনৈতিক প্রতিরক্ষা কৌশল” হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বেইজিং মনে করে, ওয়াশিংটনের একতরফা শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা চীনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই তারা নিজস্ব বাজার রক্ষায় কঠোর হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপত্তি: বাণিজ্য ঘাটতি ও বাজার হারানো
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে, এবং চীনের শুল্ক বৃদ্ধি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। বিশেষ করে, চীনা ভোক্তাবাজার থেকে মার্কিন পণ্য ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, টেসলার ইভি বিক্রয় চীনে গত বছরের তুলনায় ৪০% কমেছে, কারণ স্থানীয় কোম্পানিগুলো (যেমন BYD, NIO) সরকারি সুবিধা পেয়ে দাম কমিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে।
এছাড়া, চীন এখন রেয়ার আর্থ মেটাল, সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য কৌশলগত কাঁচামালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে, যা মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
- যুক্তরাষ্ট্র এখন কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি—
- বাণিজ্য আলোচনা জোরদার: চীনের সাথে নতুন করে বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ বাড়ানো হতে পারে।
- বিকল্প বাজার অনুসন্ধান: ভিয়েতনাম, ভারত ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
- শিল্পনীতি পুনর্বিন্যাস: চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য মার্কিন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষণ: কে এগিয়ে?
চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে এখন পর্যন্ত চীন কৌশলগতভাবে এগিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষা, প্রযুক্তি স্বনির্ভরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য জোট (BRICS, RCEP) ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের বাজার ছাড়া বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই শুল্ক যুদ্ধের ফলাফল শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমঝোতা না হয়, তবে বাণিজ্য বিভাজন আরও গভীর হবে, যা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও সরবরাহ সংকট বাড়াতে পারে। আগামী দিনে কে কোন কৌশল নেয়, সেটাই নির্ধারণ করবে বাণিজ্য যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল।