বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) ইলিশের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইলিশ মাছের আকারভেদে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশন শুক্রবার (রোববার তথ্য হিসেবে দেওয়া) একটি বিস্তারিত রিপোর্টে তুলে ধরে।
বিটিটিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে ইলিশের দাম বাজারে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে কেজি দরে সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা পৌঁছেছে। এ ধরনের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে বাজারে ভোক্তা ও বিক্রেতাদের মধ্যে চলেছে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ। সমস্যা নিরসনেbitttc বাজারের তথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সমীক্ষাটি করেছে।
স্থানীয় বাজার ও রপ্তানি মূল্য পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে, স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম সর্বনিম্ন ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, কিন্তু ভারতের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে গড়ে প্রতি কেজিতে ১৫৩৪ টাকা মূল্যে। ভারতে এখনো ৯৭ টনের বেশি ইলিশ রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যবসায়ীরা রপ্তানি থেকে লাভ করলেও, স্থানীয় বাজারে উৎপাদন মূল্যের তুলনায় অতিরিক্ত লাভ করছে।

কমিশন ইলিশ মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ১১টি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: চাহিদা ও সরবরাহের অনিশ্চয়তা, ভ্রাম্যমাণ সিন্ডিকেট ও স্টকহোল্ডিং, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ও মাছ ধরার ব্যয় বৃদ্ধি, নদীর নাব্য সংকট ও পরিবেশগত ঝুঁকি, অবৈধ জাল ও নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা, ‘দাদন’ প্রথা, মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য ও রপ্তানির প্রভাব।
গত চার মাসের দাম পার্থক্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—জুনে প্রতি কেজির দাম ছিল ৬০০ থেকে ২২০০ টাকা; জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা; আগস্টে সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে দাম কিছুটা কমে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়, কিন্তু সেপ্টেম্বরে আবার বেড়ে পুনরায় ৯০০ থেকে ২২০০ টাকায় পৌঁছায়।
বিটিটিসির প্রতিবেদনে গত পাঁচ বছর ধরে ইলিশ বাজারের মূল্য ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই সময়ে রপ্তানি মূল্যও একই মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সুবিধার্থে ইলিশের আকার ও গুণগত মান অনুযায়ী নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ ও কঠোর নজরদারি করা উচিত।
এমন উদ্যোগ বাজারে স্থিতিশীলতা আনার পথ সুগম করবে এবং অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত অনিয়ম ও সিন্ডিকেট প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে।