পাট কেবল আমাদের সোনালি আঁশ নয়, আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক সোনালি অধ্যায়। স্বাধীনতার পরে পাট ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে আবার পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত মানের পাট উৎপাদিত হয়।
‘রপ্তানিতে পাট পণ্যের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সরকারের পক্ষা থেকে প্রয়োজন নীতি সহায়তা। তাহলে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় সম্ভব। যা এখন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর রমনায় অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘পাটের আঁশেই ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের টাকা দিতে হবে না। টাকা চাই না।আমরা চাই নীতি সহায়তা। আমাদের ৫ বা ১০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা চাই দামের স্থিতিশীলতা। পাটের এখন এক রকম দাম, কিন্তু পরের মাসে কত দাম হবে সেটা আমরা ধারনাও করতে পারি না।এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সাবসিডি দরকার নেই। আমাদের দরকার সরকারের সুন্দর একটা পলিসি। আমি দেশে সবচেয়ে বড় মিলের পরিচালক হিসেবে বলতে পারছি না, দুই মাস পর পাট সুতার দাম কত হবে। এমন অস্থিতিশীল দাম যদি হয়, তাহলে তো ইন্ড্রাস্ট্রি বাড়বে না। জুটের অনেক সম্ভাবনা। আমাদের নীতিগত সমন্বয়হীনতার কারণে, পাট মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় নিয়ে যদি একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। বাংলাদেশে যে ২০০টি জুট মিল আছে, সেগুলো আবার সচল হবে। আমরা এখন এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছি, কিন্তু সরকার যদি সঠিক পলিসি নেয় তাহলে এই রপ্তানি ৫ বিলিয়ন করা সম্ভব। পাট শুধু প্যাকেজিং কাজে ব্যবহার করলে হবে না। এটা দিয়ে জ্যাকেট, কোট, শাড়ি বানাতে হবে। এর ব্যবহারে বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসতে হবে। তাহলে এটা সম্ভব।
একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা পাট পণ্যের বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সরকার পাটের ফাংগাস রোধে জিনোম সিকুয়েন্স নিয়ে কাজ করছে। পাটকে আমরা কৃষি পণ্যে হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছি। যাতে এই শিল্পকে উন্নত সাহায্য করে। সরকার জুটমিলগুলকে চালাতে সহজ শর্তে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা পাট পণ্য উৎপাদন করছেন। যেখানে বেশিরভাগই নারীরা কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছেন। আমাদের সরকারের পরিকল্পিতভাবে পাট শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে। এখনই সময় পরিবেশবান্ধব পাট পণ্য ব্যবহার ও এই শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করা।
বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিকল্প পণ্য হিসেবে পাটে ব্যবহার বাড়াতে ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন আমাদের গার্মেন্টস পণ্য বিশ্বের ৬৭টি দেশের রপ্তানি হচ্ছে। আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশে। এখন সময় এসেছে পণ্যের বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসতে। এজন্য পরিবেশসম্মত পাট পণ্যের দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, পাট আমাদের সম্পদ। পাট উৎপাদনে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয়। এখন আমাদের নজর দিতে হবে গার্মেন্টসে কিভাবে পাটের সুতা ব্যবহার করা যায়। ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য পূরণে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে পাট পণ্য।
সভা শেষে পাটের ব্যাগ, শাড়ি ও উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরেস, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ প্রমুখ।