সম্প্রতি রাটগার্স ইউনিভার্সিটি হেলথ রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রায় ৬০ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের বন্দুক সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং তাদের অধিকাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের এলাকায় বাস করছে।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন যে গবেষণাটি নিশ্চিত করে যে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় চলমান পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বর্ণবাদ সেখানে গভীরভাবে শিকড় গেড়েছে, ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সেখানে বেড়েই চলছে,পক্ষপাতমূলক বিবাদ অব্যাহত রয়েছে এবং অভিবাসীরা মারাত্মকভাবে বঞ্চনা এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস ইন আমেরিকা ২০২৩ রিপোর্ট’এ আমেরিকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে অসংখ্য সমৃদ্ধ তথ্য এবং অনেক সুষ্পষ্ট মামলা ব্যবহার করেছে ।
উদাহরণ হিসেবে বন্দুক সহিংসতার কথা আমরা এখানে বলতে পারি। বন্দুক সহিংসতা বিষয়ক আর্কাইভ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমপক্ষে ৬৫৪টি গণগুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বন্দুক সহিংসতার কারণে প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ মারা গেছে, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে ১১৭ জন মারা গেছে।
প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে যে আমেরিকান রাজনীতিবিদরা কেবলমাত্র তাদের নিজেদের অর্থ এবং রাজনৈতিক স্বার্থের কথা চিন্তা করেন এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌছানো কঠিন যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে তাদের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে বাধ্য করবে।
একই সময়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যারা রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের তুলনায় আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ক্রমশ কোনঠাসা হচ্ছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং “আমেরিকান মানবাধিকার বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত মার্কিন শ্রেনীর অধিকারে পরিণত হয়েছে এবং তারা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ১৯২৯ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ডের পর সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। তথ্য বলছে যে গত বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট সম্পদের ৬৬.৬% ভাগ সর্বোচ্চ আয়ের শীর্ষ ১০ ভাগ লোকের পকেটে ছিল।
এর পরিবর্তে জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের নীচে মানুষের কাছে সমস্ত সম্পদের মাত্র ২.৬ শতাংশের মালিকানা রয়েছে। একটি গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আমেরিকানরা যে কারণে আস্থা হারিয়েছে তা মূলত দেশটির দীর্ঘস্থায়ী অর্থ-নির্ভর রাজনীতি এবং পক্ষপাতমূলক বিভক্তির কারণে।
আমেরিকান গণতন্ত্র এখন মানুষের কাছে ক্রমশ একটি অযৌক্তিক বিষয়ের পাশাপাশি স্বার্থ হস্তান্তরের খেলায় পরিণত হয়েছে। আমেরিকান জনমত এই পরিস্থিতিকে উপহাস করে বলে থাকে যে যতক্ষণ আপনার কাছে অর্থ থাকবে আপনার ক্ষমতা থাকবে কারণ সকল নাগরিক ভোট দেয় না কিন্তু অর্থ দেয়”।
আমেরিকার ভেতরে বিশেষ অধিকার এবং বাইরে আধিপত্যবাদ অনুসরণ করা হয়
ইউক্রেনে গুচ্ছ অস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্রের ক্রমাগত চালান এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা প্রদান থেকে শুরু করে ইরান, কিউবা, সিরিয়া এবং অন্যান্য অনেক দেশের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে মার্কিন সরকার। বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ করার অজুহাতে আমেরিকা মানবাধিকার ইস্যুকে সব সময় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এইভাবে মার্কিন সরকার বিভিন্ন দেশে গুরুতর মানবিক সংকট সৃষ্টি করে চলেছে এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের কারণগুলোকে দুর্বল করছে।
বিশ্ব এবং আমেরিকার মানুষ স্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে তথাকথিত ‘আমেরিকান মানবাধিকার’ একটি বিশেষ সুবিধা ছাড়া আর কিছুই নয় যা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু লোকই উপকৃত হয় এবং অন্যদিকে এটি নির্লজ্জ আধিপত্যের একটি হাতিয়ার যা বাইরের দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
মানবাধিকার ইস্যু যা কিছু আমেরিকান রাজনীতিবিদ ক্রমাগত প্রচার করে এই ধরনের বিতর্কিত এবং মন্দ কাজের মুখে তথাকথিত ‘মানবাধিকারের বিচারক’র উচিত নিজেরই বিচার করা।
তথ্যঃপার্সটুডে