গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন (CIA Assessment) অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। তবে, সীমান্ত সংঘর্ষ, সাইবার যুদ্ধ বা প্রোপাগান্ডা লড়াই বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন।
কী বলছে CIA-র মূল প্রতিবেদন?
১. কার্গিল-স্টাইলের যুদ্ধের ঝুঁকি কম:
- ১৯৯৯-এর মত বড় সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা কম, কারণ দুই দেশই পারমাণবিক শক্তি হওয়ায় “পারস্পরিক ধ্বংসের ভয়” (Mutually Assured Destruction) কাজ করছে।
- তবে, LOC (লাইন অব কন্ট্রোল) বরাবর ছোটখাটো গোলাবর্ষণ ও সীমান্ত সংঘর্ষ চলতে পারে।
২. কাশ্মীর ইস্যুতে অচলাবস্থা:
- পাকিস্তান ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখবে, কিন্তু সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সামর্থ্য বা ইচ্ছা তাদের নেই।
- ভারতের সেনাবাহিনী LOC-এ কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে, ফলে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশের চেষ্টা কমেছে।
৩. সাইবার ও তথ্য যুদ্ধ বাড়ছে:
- CIA-র মতে, দুই দেশই একে অপরের ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার (বিদ্যুৎ গ্রিড, ব্যাংকিং সিস্টেম) লক্ষ্য করে হ্যাকার আক্রমণ চালাচ্ছে।
- পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলি ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য (Fake News) ছড়াচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
৪. আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের ভূমিকা:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ন্ত্রণে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী।
- তবে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট (IMF-এর সহায়তা নেওয়া) এবং ভারতের সাথে বাণিজ্য বাড়ানোয় ইসলামাবাদ যুদ্ধের দিকে যেতে চাইবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধ হবে কি? CIA-র মূল পূর্বাভাস
- ৭০% সম্ভাবনা: স্থানীয় পর্যায়ে সংঘর্ষ (সীমান্তে গোলাবর্ষণ, স্পেশাল অপারেশন)।
- ২০% সম্ভাবনা: সাইবার/ড্রোন যুদ্ধ বা টার্গেটেড কিলিং (জম্মু-কাশ্মীরে)।
- ১০% এর কম: পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ, কারণ পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে দুই পক্ষই বড় ঝুঁকি নেবে না।
বিশ্লেষণ: কেন যুদ্ধের আশঙ্কা কম?
- অর্থনৈতিক চাপ: পাকিস্তান বর্তমানে IMF-এর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিচ্ছে; যুদ্ধ করলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।
- ভারতের কৌশল: দিল্লি কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে; তারা সামরিকের চেয়ে কূটনৈতিক সমাধান চাইছে।
- গ্লোবাল প্রেসার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন- এই অঞ্চলে অস্থিরতা চায় না, কারণ এটি তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সতর্কতা: যদি কাশ্মীরে কোনও বড় সন্ত্রাসী হামলা হয় (পুলওয়ামা-স্টাইল), তাহলে ভারত জবাবদিহি চাইতে পারে, যা উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে।
শেষ মন্তব্য
CIA-র প্রতিবেদন স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় যুদ্ধ এখনই আসন্ন নয়, কিন্তু অস্থিরতা থেকেই যাচ্ছে। উভয় দেশের নীতিনির্ধারকদের সংযম ও কূটনৈতিক আলোচনার উপরই শান্তি নির্ভর করছে।
সূত্র: মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত বিশ্লেষণ (২০২৪), ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের রিপোর্ট, এবং স্ট্র্যাটফর-এর দক্ষিণ এশিয়া মূল্যায়ন।