মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন শাহরুখ খান। ক্রিকেটার শচিন তেন্ডুলকরের পাশে বসেছিলেন তিনি। তারপর একসময় শাহরুখকে দেখা যায়, তিনি দোয়া করছেন। তারপরই মাস্ক নামিয়ে ঠোঁটটা ছুঁচলো করে তিনি মুখ থেকে হাওয়া ছাড়েন। এই ভিডিও পোস্ট করে বিজেপি নেতা অরুণ যাদব প্রশ্ন তোলেন, শাহরুখ কি থুতু ছেটাচ্ছিলেন?
তারপরই শুরু হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের বন্যা। বেশ কিছু পোস্ট শাহরুখের পক্ষে থাকলেও কিছু পোস্টে বলিউড সুপারস্টারকে প্রবল সমালোচনা করা হয়। থুতুর অভিযোগ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। যা ছিল মুলত, শাহরুখ খানের সঙ্গে ছিলেন তার ম্যানেজার পূজা দাদলানি। শাহরুখ যখন দোয়া করছিলেন, তখন পূজাও হাতজোড় করে প্রার্থনা করছিলেন। আর শাহরুখ ফু দিয়েছিলেন প্রার্থনার রীতি মেনে।
শাহরুখের প্রার্থনা
সামাজিক মাধ্যমে যারা শাহরুখের পক্ষে কথা বলেছেন, তাদের বক্তব্য, শাহরুখ আসলে ধর্মীয় রীতি মেনে প্রথমে লতা মঙ্গেশকরের জন্য দোয়া বা প্রার্থনা করেন। তারপর ফু দেন অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য। থুতু ফেলার অভিযোগ তাই কোনোভাবেই ধোপে টেকে না।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া ফ্যাক্ট চেক করে জানিয়েছে, শাহরুখ খান ইসলামের রীতি অনুয়ায়ী দোয়া করেছিলেন। তিনি লতা মঙ্গেশকরের মরদেহে ফুলের মালা দেন। লতার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। তারপর দুয়া করেন। শাহরুখ খানের সঙ্গে ছিলেন তার ম্যানেজার পূজা দাদলানি। শাহরুখ যখন দোয়া করছিলেন, তখন পূজাও হাতজোড় করে প্রার্থনা করছিলেন। আর শাহরুখ ফু দিয়েছিলেন প্রার্থনার রীতি মেনে।
তারকাদের সমালোচনা
শাহরুখের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলিউডের বেশ কয়েকজন তারকা। উর্মিলা মাতঙ্গকর বলেছেন, ”পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে, মানসিকতা এতটাই নীচে নেমেছে যে, প্রার্থনাকে তারা থুতু ফেলা ভাবছে। রাজনীতি এতটাই নীচে নেমেছে যে, যিনি দেশের জন্য এত সম্মান নিয়ে এসেছেন, তাকে এই ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে।”
শাহরুখ ও পূজার ছবি শেয়ার করে অভিনেত্রী খুশবু লিখেছেন, ”মেরা দেশ, মেরা ভারত, মেরি শান, মেরি জান।” আসলে যে ছবি ভারতের সৌভ্রাতৃত্বের বিজ্ঞাপন হয়ে থাকার কথা ছিল, তা নিয়েই এই ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে।শাহরুখের বিরুদ্ধে ট্রোলের জবাব দিতে অনেক মানুষ সামনে এসেছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন পবিত্র, সুন্দর প্রার্থনাকেও এমনভবে দেখা যায়, দেখা উচিত?
কেন এই বিতর্ক?
সুরকার জয় সরকার জানিয়েছেন, ”না দেখার একটা চোখ তৈরি করেছি, না শোনার একটা কান তৈরি করেছি। আমি এই বিষয়গুলি নিয়ে কথাও বলি না। আমার অবস্থা হয়েছে সেই তিন বাঁদরের মতো, যারা দেখে না, শোনে না, বলে না।”
মনোসমাজবিদ মোহিত রণদীপের মতে, ”এই রকম বিতর্ক যখন শুরু হয়, তখন বোঝা যায়, সমাজের অজ্ঞতা কোন জায়গায় গিয়েছে।” তিনি বলেছেন, ”যারা এই ধরনের কথা বলেন, তাদের প্যারানয়েড বলে। যাদের ভোট দিয়ে আনা হয়েছে, তাদের উচিত এর প্রতিবাদ করা, এই ধরনের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। বাস্তবে তা হচ্ছে না।”
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মহারাষ্ট্রের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ”বাকি সব তারকাকে ক্ষমতাসীন দল হয় নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে পেরেছে বা তাদের বিরুদ্ধাচরণ বন্ধ করতে পেরেছে। ব্যতিক্রম শাহরুখ খানের মতো গুটিকয়েক তারকা। সম্ভবত এজন্যই তাকে এমনভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে।”
সূত্র : ডয়চে ভেলে