অবশেষে ভালোবাসা সপ্তাহের প্রত্যেকটা দিন পেরিয়ে উপস্থিত সেই শুভক্ষণ। ভালোবাসার মানুষদের জন্য উৎসর্গ করা হয় ভ্যালেন্টাইন্স ডে, অথচ এই দিনের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। তার খোঁজ কজন রাখেন? ভ্যালেন্টাইন্স ডে (Valentines day) আসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একগুচ্ছ প্রেম ভালোবাসার গল্প। যেখানে রয়েছে সারা জীবন একসাথে পথ চলার প্রতিশ্রুতি। প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে পাওয়া চকলেট, নানান গিফট, টেডি কিংবা একটু মূল্যবান সময়। এসব কিছুর মিলেমিশে স্পেশাল হয়ে ওঠে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। যদিও সম্পর্কের মধ্যে থাকা বিশ্বাসের থেকে কোন গিফটই দামি হতে পারে না। জানেন কি, এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রাণ হারাতে হয়েছিল ভালোবাসার মানুষকে, যিনি সর্বদা মানুষের মনে ভালোবাসার বোধ জাগিয়ে তুলতে চাইতেন। প্রথম ভ্যালেন্টাইন্স ডে কবে পালন করা হয়েছিল এবং এই ডে পালনের পিছনে আসল উদ্দেশ্যটাই বা কী ? ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানে শুধু মাত্র ভালোবাসার আদান-প্রদান মোটেও না। এই দিনটিকে ঘিরে যদি একটু ইতিহাসের পাতা উলটে দেখেন, দেখবেন অনেক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। এই দিনটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
সর্বপ্রথম সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামে পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে এই দিবস পালন করা হয়েছিল। পোপ গেলাসিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের এক বাসিন্দা, যিনি একাধারে ছিলেন পুরোহিত, চিকিৎসক, ধর্মপ্রচারক অপরদিকে তিনি বিবাহের অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তাঁর আত্মত্যাগের ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। যদিও সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে ঘিরে রয়েছে নানান গল্প।
দ্বিতীয় শতাব্দীতে রোমান সৈন্যদের বিবাহের কোনো অনুমতি ছিল না। তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস মনে করতেন অবিবাহিত সৈনিকরা অনেক বেশি দক্ষ হন। তাই তিনি আইন করে সৈনিকদের বিবাহ করতে নিষেধ করে দেন। তখন পোপ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন বুঝতে পেরেছিলেন, এই আইন সঠিক নয়। তাই যে সৈনিকরা বিয়ে করতে চাইছেন, তাদেরকে লুকিয়ে বিয়ে দিতেন। শুধু তাই নয় মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতেন ভালোবাসার বোধ। এই ঘটনার কথা রাজার কানে যেতেই তিনি ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
আরেকটি প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন চিকিৎসক। যিনি একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য চিকিৎসা করছিলেন । তিনি এতটাই দয়ালু ছিলেন, কাউকে কষ্ট পেতে দেখলেই সেখানে ছুটে চলে যেতেন। যারা তেতো ওষুধ খেতে পারতেন না, সেই ওষুধে তিনি দুধ ও মধু মিশিয়ে খাইয়ে দিতেন। সেই সময় দাঁড়িয়ে রোমে খ্রিস্টধর্ম খুব একটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। ভ্যালেন্টাইন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতেই রেগে আগুন হয়ে যান তৎকালীন সম্রাট। রোমান সৈন্যরা তৎক্ষণাৎ ভ্যালেন্টাইনকে বেঁধে নিয়ে যায়, তখনও কিন্তু চিকিৎসা চলছিল সেই অন্ধ মেয়ের। ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে তিনি সেই অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে লেখা ছিল ‘ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন’ (From your Valentine)।