ঢাকাসোমবার , ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জীবনধারা
  6. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  7. বিনোদন ভুবন
  8. বিবিধ
  9. ভিডিও নিউজ
  10. রাজধানী
  11. রাজনীতি
  12. শিক্ষা
  13. সর্বশেষ
  14. সারাবাংলা
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

Manipur Violence: আবারও জ্বলে উঠল মণিপুর, নতুন করে সংঘর্ষ, গুলি, অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২৭, ২০২৩ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরছেন তাঁরা। 

আবারও নতুন করে হিংসার আগুন মণিপুরে। বৃহস্পতিবার আবারও গুলি চলল এলোপাথাড়ি। নতুন করে ফের মেইতেই এবং কুকিদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছে বলে মিলছে খবর। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছে বিষ্ণুপুর জেলায়। একাধিক বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। আতঙ্কে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরছেন তাঁরা।

বুধবার রাত থেকেই নতুন করে গুলিবর্ষণ, সারারাত গুলি চলেছে

বিষ্ণুপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকেই নতুন করে গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছে। সারারাত গুলি চলেছে। আতঙ্কে বাড়ির বাইরে বেরনো তো দূর, খাবার পর্যন্ত মুখে দিতে পারেননি কেউ। মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতিকে ২০০২ সালের গুজরাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজ্যে সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক এমভি গোবিন্দন। তাঁর বক্তব্য, “মণিপুরে হত্যা এবং দাঙ্গা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গুজরাত গণহত্যারই পরবর্তী অধ্যায় এটি।”

এর আগে, বুধবারও একদফা অশান্তি হয় মণিপুরেরএকাধিক জায়গায়। মোরে জেলায় কমপক্ষে ৩০টি বাড়িঘর, দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়।  শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও গুলি বিনিময় হয় দুষ্কৃতীদের। তার জেরে মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত মোরে বাজার এলাকা সম্পূর্ণ খালি করে দেওয়া হয়েছে।  বাাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র সরে গিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, অগ্নিসংযোগের পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। হামলাকারীদের সরানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। তাতে দু’পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। মঙ্গলবার আবার নিরাপত্তাবাহিনীর দু’টি বাসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় কাংপোকপি জেলায়। কারও প্রাণহানি হয়নি যদিও, তবে নিরাপত্তাবাহিনীর বাসে অগ্নিসংযোগে আতঙ্ক ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এক নাবালক-সহ মোট ন’জনকে গ্রেফতার করা হয় এই ঘটনায়।

মণিপুরে হিংসায় বিরাম নেই, ১৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু

গত তিন মাস ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে মণিপুর। অগ্নিসংযোগ, লুঠ, নারী নির্যাতনও চলছে অবাধে। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, মার খেয়ে অসুস্থ, এমন মানুষের সংখ্যা অগণিত। মণিপুরে অশান্তির এই আঁচ ছড়িয়েছে গোটা দেশে। সংসদের বাদল অধিবেশন উত্তাল হয়ে উঠেছে আগাগোড়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতির দাবি তুলছেন বিরোধীরা। 

উল্লেক্ষ্য ভারতের অনেক ছোট রাজ্যের তুলনায় মণিপুরের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। বিবিধ কারণে বার বার জাতীয় স্তরে খবরের শিরোনামে চলে আসার একটি ঐতিহ্য আছে এই রাজ্যের। বিদ্রোহ ও বিক্ষোভের নানা ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত ও ব্যক্তিত্ব তৈরি করে এই রাজ্যে বাকি দেশের নজরে নিয়ে এসেছে এক জাজ্বল্যমান বাস্তব: দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের সমাজগুলির প্রতি জাতীয় স্তরে এখনও কী গভীর অবজ্ঞা আর অবহেলা। সম্প্রতি মণিপুরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আবারও সেই একই বার্তা নিয়ে এল। ‘দেখামাত্র গুলির আদেশ’ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এ দেশে সহসা দেখা যায় না। কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার মতো ঘটনাও অন্যত্র সচরাচর ঘটে না। বুঝতে অসুবিধা নেই, প্রথমত, মণিপুরে যে সংঘর্ষ চলছে তা সামান্য নয়, সহজে সমাধানযোগ্য নয়। এবং দ্বিতীয়ত, এই সমস্যা আকস্মিক ভাবে তৈরি হয়নি, অনেক গভীরে শিকড় না থাকলে এত প্রবল ও রক্তাক্ত সংঘর্ষ ঘটতে পারত না। রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রকেও এর দায়িত্ব নিতে হবে। ঠিক সময়ে পদক্ষেপ করলে ঘটনা এমন ভয়াবহতায় পৌঁছত না।

সমস্যার শুরু মেইতেই জনগোষ্ঠীকে জনজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে নিয়ে। মেইতেই সে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী, প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ তার অন্তর্ভুক্ত। এত দিন কুকি ও নাগারা জনজাতি হিসাবে গণ্য হলেও মেইতেই-রা ছিল তার বাইরে। সাধারণ দৃষ্টিতে তাতে কোনও অসঙ্গতি ছিল না, কেননা আর্থসামাজিক ভাবে তারাই অনেক এগিয়ে, বাকিরা পিছিয়ে। কিন্তু তবু, সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জনজাতি পরিচয়ের হাজারো সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে মেইতেই-রা এ নিয়ে দীর্ঘ কাল ধরে ক্ষুব্ধ। এত দিনে সেই ক্ষোভের ফল ফলল, জনজাতি মর্যাদা দেওয়া হল। স্বভাবতই বাকি জনগোষ্ঠীরা এতে প্রবল রুষ্ট। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের জন্য সংরক্ষিত জায়গাটিতে এ বার মেইতেই-রাও ভাগ বসাতে আসছে। জমি থেকে চাকরি, শিক্ষাসুযোগ থেকে পারিবারিক নিরাপত্তা, সব কিছুই সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং, মণিপুরি সমাজের এক বড় অংশ প্রবল বেঁকে বসেছে: কোনও মতেই মেইতেই-দের জনজাতি পরিচয়ের স্বীকৃতি সে রাজ্যে মানা হবে না, এই মর্মে। তার থেকেই অগ্নিকাণ্ড, হত্যালীলা। প্রায় শ’খানেক মানুষের প্রাণনাশ ও সহস্র মানুষকে বিপন্নতায় পর্যবসিত করে সে রাজ্যে নেমে এসেছে মাৎস্যন্যায়।

সমস্যাটি জটিল, এবং সমস্যার প্রতি প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গিও অক্ষমণীয় রকমের অতিসরল। জনজাতি মর্যাদা বস্তুটিকে সংরক্ষণ নীতির সঙ্গে যুক্ত ভাবে দেখা ছাড়া গত্যন্তর নেই, এ কথা যদি মেনে নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এই মর্যাদা কারা পাবেন আর কারা পাবেন না, তার সঙ্গে স্থানীয় ক্ষমতাবিন্যাসের একটা অঙ্গাঙ্গি যোগ থাকা জরুরি। অর্থাৎ, এই মর্যাদাভেদ কোনও শূন্য তলে দাঁড়িয়ে হতে পারে না, ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত বিচার করে তবেই কোনও গোষ্ঠীকে এই স্বীকৃতি দান করা যেতে পারে। যদি মেইতেই-দের এই স্বীকৃতি দেওয়া আবশ্যক হয়, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য গোষ্ঠীর মতৈক্য তৈরি করার প্রয়াসটিও জরুরি ছিল। মতৈক্য সহজ না হতে পারে, কিন্তু তাই বলে মতৈক্য নির্মাণের অভিমুখেই না এগোনো কোনও সমাধান হতে পারে না। উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রশাসনিক প্রবণতার কারণেই এত বড় সংঘর্ষ পরিস্থিতি উদ্ভূত হল। উপরন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার এখন যে ভাবে সঙ্কটের মোকাবিলা করছে তার মধ্যেও দমনের প্রবণতাই স্পষ্ট। এর ফলে সঙ্কট আপাতত ও আপাত ভাবে কমানো গেলেও ভবিষ্যতে তা আবার মাথা চাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা মজুত রইল। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে, বিশেষত মণিপুরের সঙ্গে, বারংবার দিল্লি যে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়— সেটি বশ্যতার। কোনও যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রে কেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্ক এমন হওয়ার কথা ছিল না।

সুত্রঃ এবিপি নিউজ