দেশের সকল নাগরিককে বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দিতে যত টাকাই লাগুক, সরকার তাতে কার্পণ্য করবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না। চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্যাকসিন আসবে। জুলাই থেকেই আবারও শুরু হবে গণটিকা দান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহে যত টাকাই লাগুক না কেন আমরা সেই টাকা দেব। ১৪ হাজার কোটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে থেকেই আমরা যোগাযোগ রেখেছি।
৮০ শতাংশ মানুষকেই ভ্যাকসিনেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
জাতীয় সংসদে ২০২২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, সরকার দেশের সকল নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য যত টাকাই লাগুক না কেন, আমরা সেই টাকা দেব।”
বিভিন্ন উৎস থেকে ইতোমধ্যে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা পাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, প্রয়োজনীয় টিকা কেনার জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
“যখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছিল, তখন থেকেই সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় চেষ্টা শুরু করে। তখন হয়ত ডব্লিউএইচও অনুমোদনও দেয়নি, কিন্তু তার আগেই আমরা… ।
“এটা দুর্ভাগ্য, ভারতে হঠাৎ করোনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেল। তারা এই ভ্যাকসিন রপ্তানি করা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা সাময়িকভাবে কিছুটা সমস্যায় পড়ে গেছি। কিন্তু বর্তমানে আল্লাহর রহমতে আমাদের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখায় টিকার সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ।
পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও সরকারের হাতে নেই।
এ অবস্থায় সরকারকে অন্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করতে হচ্ছে। টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং চীনের উপহার হিসেবে দুই দফায় সিনোফার্মের তৈরি ১১ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে।
সিনোফার্মের কাছ থেকে সরকারি পর্যায়ে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কেনার একটি প্রস্তাব সরকার ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে ওই টিকা বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে।
এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি ২৫ লাখ ডোজ টিকা শিগগিরই দেশে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সব দেশ ও কোম্পানির সঙ্গে সরকার যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, “আমরা আশা করছি জুলাই মাস থেকে আরো ভ্যাকসিন আসবে এবং ব্যাপকভাবে আমরা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করব।”
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিদেশগামী কর্মীদের আগে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, যাতে বিদেশে গিয়ে তাদের কোয়ারেন্টিন করতে না হয়, কর্মস্থলে যেতে কোনো বাধা না আসে।
“দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে পর্যায়ক্রমে আমরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কোন ভ্যাকসিন কোন বয়স পর্যন্ত দেওয়া যাবে, তার একটা সীমাবদ্ধতা আছে, এটা ডব্লিউএইচওর নির্দেশ। সেটা বিবেচনায় রেখে এমনকি স্কুল থেকে শুরু করে এবং উচ্চশিক্ষায় যারা… সকলে যাতে ভ্যাকসিন পায়। এর মধ্যে যেন আমরা স্কুল খুলতে পারি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারি সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নেব।”
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ ও মহামারীতে আক্রান্তদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন সংসদ নেতা।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা খাতে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ১১.৯২ শতাংশ বেশি।
“এছাড়া করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ এখনো বিদ্যমান থাকায়, মহামারী মোকাবেলায় যে কোনো জরুরি চাহিদা মোকাবিলায় আমরা এই বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি।”
দ্রুততম সময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকার কথাও তিনি বলেন।
“আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণা তেমন ছিল না। আমরা তার উপর এবার গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছি। এই তহবিলে আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
দেশের উন্নয়নে ও মানুষের কল্যাণে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথাও সংসদে বলেন সরকার প্রধান।