রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশপ্রহরী মোবারক হোসেন প্রায় তিন বছর ধরে এখানে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োজিত আছেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাই তাঁকে পাওয়া যায় জরুরি বিভাগে। জরুরি বিভাগে অবলীলায় রোগীকে ইনজেকশন দেওয়া ও কাটাছেঁড়া সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি।
বিষয়টির সত্যতা উদ্ঘাটনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহু দিন ধরেই চিকিৎসকের কাজ করে যাচ্ছেন নৈশপ্রহরী মোবারক হোসেন। রোগীরা তাঁর পরিচয় জানেন না। যারা কোনোভাবে জানতে পারেন, আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফেরেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ এ নিয়ে কথা বলার সাহস করেন না।
সম্প্রতি সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত জাফর হোসেন নামের এক ব্যক্তি দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। জরুরি বিভাগের কমিউনিটি হেলথ কর্মকর্তারা অলস বসে থাকলেও নৈশপ্রহরী মোবারক হোসেন ওই রোগীর কাটাছেঁড়া সেলাই করতে থাকেন। অবাক করার বিষয় হলো, সেলাই করার সময় কানে হেডফোন দিয়ে গানও শুনছিলেন তিনি। রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনেরা বুঝতেই পারেননি তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নৈশপ্রহরী।
চিকিৎসা নিতে আসা আসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তাররা আড্ডা দেন। আবার অনেক চিকিৎসক অলস বসে থাকেন। এ সময় রোগী এলে নৈশপ্রহরী মোবারক হোসেনকে দিয়ে কাটাছেঁড়া এমনকি ইনজেকশনও পুশ করানো হয়। এসব বিষয়ে তাঁর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। একজন জরুরি রোগীর চিকিৎসায় এমন অবহেলা কখনই কাম্য নয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী নাহিদ হাসান বলেন, আমার দেহে কেটে যাওয়া জায়গায় সেলাই করে দিয়েছেন মোবারক হোসেন। পরে জানলাম তিনি ডাক্তার না, নৈশপ্রহরী। স্থানীও একজন বলেন, হাতে কলমে ডাক্তারদের কাছ থেকে এসব কাজ করতে জানলেও, সাধারনের চোখে এসব বেমানান ।
দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশপ্রহরী মোবারক হোসেনও এ কথা স্বীকার করেন। তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, কাগজে কলমে আমার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তবে দশ বছর ধরে আমি ইনজেকশন ও কাটাছেঁড়া সেলাইয়ের কাজ করছি। ডাক্তাররা দেখিয়ে দেন, সে অনুযায়ী আমি কাজ করি।
নৈশপ্রহরী আরও বলেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া কাজ করা অবৈধ এটা আমি জানি । ডাক্তাররা বলেন তাই আমি তাঁদের নির্দেশনা পালন করি। তাঁরা যদি আমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন, তাহলে করব না।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবা খাতুন বলেন, নৈশপ্রহরী ইনজেকশন ও কাটাছেঁড়া সেলাই করবেন এটা কখনই কাম্য নয়। এটা মারাত্মক অপরাধ। তবে এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।