করোনাভাইরাসের ‘ডেল্টা ধরন’ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে পারলেও গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা তুলে ধরা হয়েছে সিডিসির নতুন এক প্রতিবেদনে।
সিডিসির পরিচালক ডা. রোশেল ভলেনস্কি শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, গত দুই মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের মধ্যে দেখা গেছে, যারা টিকা নেননি তাদের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাড়ে চারগুণ বেশি, হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা ১০ গুণ বেশি এবং মৃত্যুর শঙ্কা ১১ গুণ বেশি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার নিয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে তিনটি সমীক্ষার ফল থেকে সংস্থাটি এসব তথ্য প্রকাশ করেছে বলে সিবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়। এসব তথ্য বলছে, সামনের দিনগুলোতে অনেকেরই বুস্টার ডোজ বা টিকার তৃতীয় ডোজ দরকার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঞ্চলে পরিচালিত সিডিসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডেল্টা ধরনের বিস্তারের মধ্যে টিকার পূর্ণ ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার হার দেশজুড়েই বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলে পূর্ণ ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের গত জুনের শেষ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আক্রান্তের হার ১০ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সমীক্ষায় টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের আক্রান্তের হার ১৮ শতাংশ পাওয়া গেছে জানিয়ে ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সার্স-কোভ-২ ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অব্যাহতভাবে কমে আসছে।”
জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে পরিচালিত সিডিসির আরেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর হার ঠেকাতে ভালো কার্যকারিতা দেখাচ্ছে টিকা। কিন্তু সিডিসির প্রকাশিত নতুন তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে আসছে। কয়েকশ হাসপাতাল এবং জরুরি সেবা ক্লিনিকের জোট ‘ভিশন নেটওয়ার্ক’ এর তথ্য বিশ্লেষণ করে সিডিসির প্রতিবেদেন বলা হয়, গত অগাস্ট মাসে ৭৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা তরুণদের তুলনায় ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম’।
নিজেদের তথ্য বিশ্লেষণ করে একই উপসংহারে পৌঁছেছে কয়েকটি ‘ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্স মেডিকেল সেন্টার’। তাদের আনুমানিক হিসাব বলছে, ৬৫ বছর ও তারচেয়ে বেশি বয়সীদের হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে টিকা ৮০ শতাংশ কার্যকর। দুটি সমীক্ষাতেই বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা আগের চেয়ে কমে আসছে। সিডিসি এর আগে জানিয়েছিল, একটি দলের ওপর পরিচালিত জরিপে হাসপাতালে ভর্তি ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে আসতে দেখা গেলেও গত জুলাই মাসেও তা ৮০ শতাংশের বেশি ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা কর্মকতারা দেশজুড়ে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন জানানোর পর সিডিসির প্রতিবেদনে নতুন এসব তথ্য উঠে এল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ দপ্তর এখনও বুস্টার ডোজের অনুমোদন দেয়নি এবং সিডিসির টিকা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের প্যানেলও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুপারিশ এখনও করেনি। সিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুস্টার ডোজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ‘ফাইজার’ প্রথম অনুমোদন পেতে পারে।
চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘মডার্না’ এবং ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ এর বুস্টার ডোজের টিকার অনুমোদন দেওয়ার বিষয়েও তারা আশাবাদী। তবে ওষুধ কোম্পানি দুটির টিকার পর্যাপ্ত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। অন্যান্য দেশের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসরায়েলের উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ইতোমধ্যে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বুধবার ‘লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন’ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি বলেন, “ইসরায়েলে যা ঘটছে তা খুবই আগ্রহ উদ্দীপক, কারণ টিকা দেওয়াসহ সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিটি বিষয়েই তারা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটির’ গবেষকদের একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়, টিকার আগাম বুস্টার ডোজ দেওয়া হলে সংক্রমণের হার ৬৮ শতাংশ কমে আসতে পারে। তবে এই প্রতিবেদনের কোনো পর্যালোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে সিবিসি নিউজ। ইসরায়েলি চিকিৎসা কর্মকর্তারা বাইডেন প্রশাসনকে তাদের বুস্টার ডোজ কর্মসূচির অপ্রকাশিত বেশ কিছু তথ্য জানিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনায় গতি বাড়ানোর আহ্বান জানান। প্রথম পর্বে দুই ডোজ টিকা পাওয়ার ৮ মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তৃতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।