ঢাকা: সম্প্রতি নগদ অর্থের চেয়ে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে লেনদেনকেই অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ মনে করা হয়। তবে চেকে লেনদেন করতে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় বিপত্তি।
অনেকেই শিকার হন প্রতারণার। ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না রেখেই চেক দিয়ে হয় এসব প্রতারণা। ফলে চেক নগদায়ন না হয়ে ডিজঅনার হয়ে থাকে।
হস্তান্তরযোগ্য দলিল (এনআই অ্যাক্ট) আইন ১৮৮১ (সংশোধিত ২০০৬) এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী চেক ডিজঅনার একটি অপরাধ।
আইনে যা বলা হয়েছে
হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন বা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ক্ষেত্রে একজন লোক অপর কোনো ব্যক্তিকে ঋণ বা অন্য কোনোভাবে দায় সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধের জন্য যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে সে ব্যাংকের ওপর একটি চেক ইস্যু করলো, কিন্তু তার হিসাবে অবশিষ্ট যে টাকা রয়েছে তা দিয়ে ইস্যুকৃত চেক সমন্বয় করার মতো পর্যাপ্ত টাকা না থাকার দরুণ কিংবা অ্যাকাউন্ট হতে টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংকের সাথে যে পরিমাণ টাকার বোঝাপড়া হয়েছে, তা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে ব্যাংক কর্তৃক উক্ত ইস্যুকৃত চেকটি অপরিশোধিত হয়ে ফেরত এলে, ওই ব্যক্তি তা দ্বারা অপরাধ সংঘটিত করেছে মর্মে পরিগণিত হবে। ’
চেক ডিজঅনারের শাস্তি
এই ধারায় অপরাধ করলে ওই ব্যক্তি এক বছর কারাদণ্ড বা চেকে লিখিত টাকার তিনগুণ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মামলার পদ্ধতি
চেক ডিজঅনারের মামলা করতে হয় আদালতে। মহানগর এলাকার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মহানগরের বাইরে সংশ্লিষ্ট জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে হয়।
তবে এই ধারায় মামলার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূর্ণ করতে হবে। চেকে উল্লেখিত তারিখ থেকে নগদায়নের জন্য ছয় মাস মেয়াদ থাকে। সেই সময়ের মধ্যে ডিজঅনার হতে হবে। চেকটি ব্যাংকের কোনো শাখায় জমা দিলে তা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক সিলমোহরসহ ডিজঅনার স্লিপ সরবরাহ করবেন।
চেক ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেকদাতাকে ওই টাকা পরিশোধে তার সর্বশেষ ঠিকানায় রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ/ডিসহ একটি লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে অথবা একটি বাংলা জাতীয় দৈনিকে নোটিশ প্রকাশ করতে হবে। নোটিশ পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ওই মামলা দায়ের করতে হবে।
মামলা দায়েরের সময় বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্র, চেক, ডিজঅনার স্লিপ, লিগ্যাল নোটিশের একটি করে ফটোকপি ফিরিস্তি করে জমা দিতে হবে এবং মামলা দায়েরের সময় মূল কপি আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়া মামলার আর্জির সঙ্গে প্রসেস ফি দাখিল করতে হবে।
লেখক: আইনজীবী ও আদালত প্রতিবেদক