আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ বছরের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তোড়জোড় চলছে। রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে ইসি গঠনের জন্য নাম চেয়েছে কমিটি। এতে সাড়া দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে সার্চ কমিটিতে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছে। কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা মুখ না খুললেও সবার আগ্রহ কারা জায়গা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দেওয়া তালিকায়।
আওয়ামী লীগের নেতারা এর আগে বলেছিলেন, বিতর্কমুক্ত ও দলীয় পরিচয় নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ১০ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হবে। নামের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তালিকায় সম্ভাব্য হিসেবে সাবেক আমলা, বিচারপতিসহ কয়েকজনের নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরলেও তারা কারা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ দলটির নেতারাও এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে রাজি নন।
জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনে একজন সিনিয়র আমলা রাখার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে থাকতে পারেন আলোচনায় থাকা সেই সাবেক আমলা। এ ছাড়াও সামরিক বাহিনী থেকে একজন ও একজন নারী থাকবেন এবারের নতুন ইসিতে।
শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে ১০ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
নাম জমা দেয়া শেষে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেন, একটি শক্তিশালী, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জনের নাম সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চায় সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। সে লক্ষ্যেই একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সার্চ কমিটিতে নাম জমা দেয়া হয়েছে।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির কাছে পাঠানোর জন্য গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম জমা দেন দলের নেতারা। সেখান থেকেই বাছাই করে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরআগে জানা গেছে, দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাবের বিষয়ে এককভাবে কোনো দায়িত্ব নেবেন না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে বৈঠকে উপস্থিত সভাপতিমণ্ডলীর ১৩ জন সদস্যের প্রত্যেককে নিজ নিজ পছন্দের নামের তালিকা জমা দিতে বলেন তিনি। এ অবস্থায় ১২ জন নেতা সাদা কাগজে নিজেদের পছন্দের নাম জমা দেন।
সভাপতিমণ্ডলীর নবনির্বাচিত সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কোনো নাম প্রস্তাব করেননি বলে জানা গেছে।
বৈঠক সূত্র জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেতারা বিভিন্ন সংখ্যক নামের প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে কিছু কমন নামও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত নামের তালিকা জমা পড়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এগুলো থেকে বাছাই শেষে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেওয়া হলো।
সার্চ কমিটির কাছে নামের তালিকা জমা দেয়া আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বলেছেন, তারা শুধু বার্তাবাহক হিসেবে সিলগালা খামে করে তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকায় কাদের নাম আছে তা জানেন না।
তবে দলীয় সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ নেতাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে। তিনি বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকে প্রকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তার চাকরির মেয়াদ নভেম্বর পর্যন্ত। শফিউল আলমকে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পছন্দ করেন বলে আলোচনা আছে দলের ভেতরে বাইরে।